AI Stethoscope Heart Disease Detection
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : স্টেথোস্কোপ – চিকিৎসাশাস্ত্রের এক অবিচ্ছেদ্য প্রতীক, যার আবিষ্কার হয়েছিল প্রায় ২০০ বছর আগে। এতদিন এটি মূলত ব্যবহার হয়ে আসছিল রক্তচাপ বা প্রাথমিক শারীরিক অসুস্থতা নির্ণয়ের কাজে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সংযোজনে এবার এই সাধারণ যন্ত্রটিই হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের হৃদরোগ নির্ণায়ক। একদল ব্রিটিশ গবেষকের দাবি, তারা এমন এক আধুনিক এআই-স্টেথোস্কোপ তৈরি করেছেন, যা ঘরে বসেই শনাক্ত করতে পারবে জটিল হৃদরোগ।
নতুন এআই স্টেথোস্কোপটির গঠন প্রচলিত যন্ত্রের চেয়ে একেবারেই আলাদা। এখানে ধাতব চেস্টপিসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে একটি ছোট যন্ত্র, আকারে খেলনার তাসের মতো। যন্ত্রটির মূল শক্তি হলো এর উন্নত মানের মাইক্রোফোন, যা হৃদস্পন্দন ও রক্তপ্রবাহের সূক্ষ্ম পার্থক্য শনাক্ত করতে সক্ষম। মানুষের কানে অশ্রাব্য এই পার্থক্যগুলো ধরা পড়লেই সিস্টেম সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ড তৈরি করে, এবং একইসঙ্গে ইসিজি রিপোর্ট সংগ্রহ করে নেয়।
চীন বিশ্বে প্রথমবারের মতো চালু করল একটি সম্পূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ভিত্তিক হাসপাতাল
চ্যাটজিপিটি-র বিরুদ্ধে মামলা : কিশোরের আত্মহত্যায় দায়ী কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?
এরপর সমস্ত তথ্য পাঠানো হয় ক্লাউড সার্ভারে। সেখানে এআই অ্যালগরিদম হাজার হাজার রোগীর পূর্ববর্তী ডেটা বিশ্লেষণ করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নির্ণয় জানিয়ে দেয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এই যন্ত্র তিন ধরনের মারাত্মক হৃদরোগ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এগুলো হলো: হৃদযন্ত্র বিকলতা (Heart Failure), হার্ট ভালভের সমস্যা, এবং অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন (Arrhythmia)।
ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন ও এনএইচএসের যৌথ গবেষণায় মোট ৯৬টি চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রায় ১২ হাজার রোগীর ওপর এই এআই স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করা হয়। ফলাফলে যা উঠে এসেছে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক:
হার্ট ফেলিওর শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে ২.৩৩ গুণ,
অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে ৩.৫ গুণ,
আর হার্ট ভালভের রোগ ধরা পড়েছে ১.৯ গুণ বেশি।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ও কার্ডিওলজিস্ট ড. সোনিয়া বাবু-নারায়ণ বলেন, “১৮১৬ সালে আবিষ্কৃত যে সাধারণ স্টেথোস্কোপ চিকিৎসকদের হাতিয়ার ছিল, সেটি আজ ২১ শতকের প্রযুক্তি দ্বারা নতুন আকার পাচ্ছে। এ ধরনের উদ্ভাবন অত্যন্ত জরুরি, কারণ অধিকাংশ সময় হৃদরোগ ধরা পড়ে তখনই, যখন রোগী জরুরি অবস্থায় হাসপাতালে চলে আসেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, রোগ যদি আগেভাগে শনাক্ত হয়, তবে চিকিৎসা শুরু করা যায় আগেই, যার ফলে রোগীরা অনেক বেশি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনযাপন করতে পারেন। তাই শুধু চিকিৎসকদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের হাতের কাছেও যদি এ ধরনের যন্ত্র পৌঁছে যায়, তবে হৃদরোগ চিকিৎসায় এটি এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে এআই ইতোমধ্যেই এক নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। স্ক্যান রিপোর্ট, ডায়াগনস্টিক অ্যালগরিদম, এমনকি সার্জারিতেও এআই ব্যবহার হচ্ছে। তবে স্টেথোস্কোপের মতো পুরনো ও সহজলভ্য একটি যন্ত্রকে এত আধুনিক ক্ষমতা দেওয়ায় চিকিৎসা হবে আরও সহজলভ্য এবং কম খরচে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই স্টেথোস্কোপ নিয়মিত ব্যবহৃত হলে কোটি কোটি মানুষ আগেভাগেই রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা নিতে পারবেন, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী ঝুঁকি কমাবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এআই প্রযুক্তি শুধু ভবিষ্যৎ নয়, বরং বর্তমানকেই পাল্টে দেওয়ার মতো শক্তি রাখে। আর এই নতুন এআই স্টেথোস্কোপ হয়তো হয়ে উঠবে আগামী দিনের প্রতিটি ঘরে রাখা অপরিহার্য স্বাস্থ্যসঙ্গী।
আরও পড়ুন :
শিশু পর্নোগ্রাফি রাখার দায়ে প্রাক্তন ডেনিশ মন্ত্রীর কারাদণ্ড