Aishwarya Rai Delhi HC Personality Rights
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তারকা ঐশ্বর্য রাই বচ্চন সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। তার দাবি, অবৈধভাবে নাম, ছবি, কণ্ঠস্বর এমনকি AI-জেনারেটেড অশ্লীল কনটেন্টে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি তার ব্যক্তিগত মর্যাদা, সামাজিক অবস্থান এবং ব্যক্তিত্বের অধিকার সরাসরি লঙ্ঘন করছে।
তার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঐশ্বর্য রাইকে কেন্দ্র করে বহু ভুয়ো কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, টি-শার্ট, কফি মগ, ওয়ালপেপারের মতো নানা পণ্যে অনুমতি ছাড়াই তার ছবি ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি একটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের “Aishwarya Nation Wealth” বলে প্রচার চালাচ্ছে এবং সেখানে তাকে ‘চেয়ারপার্সন’ হিসেবে দেখানো হয়েছে, অথচ তার কোনো অনুমতি বা সম্পৃক্ততা নেই।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঐশ্বর্য রাইয়ের মুখ বসিয়ে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে এবং অনেকেই সেগুলো ভুয়ো ভেবে বিশ্বাস করছে। আদালতে আইনজীবীরা বলেন, এটি শুধু মানহানি নয়, বরং তার গোপনীয়তার ওপর গুরুতর আঘাত।
বিচারপতি তেজস কারিয়া শুনানি চলাকালে বলেন, আদালত এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। তিনি ইঙ্গিত দেন, একাধিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পৃথক নির্দেশ জারি হতে পারে, যাতে ঐশ্বর্য রাইয়ের নাম-ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার না করা যায়। আদালত আরও জানায়, গুগলের মতো প্ল্যাটফর্ম নির্দিষ্ট URL সরবরাহ করলে কনটেন্ট অপসারণে পদক্ষেপ নিতে পারে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ নভেম্বর ২০২৫-এ, এবং মূল শুনানি হবে ১৫ জানুয়ারি ২০২৬-এ। ফলে আইনি লড়াই দীর্ঘ হতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতে এর আগে অনিল কাপুর ও আমিতাভ বচ্চনের মতো তারকারাও একই ধরনের মামলা করেছেন। তাদের কণ্ঠস্বর, ক্যাচফ্রেজ ও চেহারার অবৈধ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আদালত সুরক্ষা দিয়েছিল। ঐশ্বর্য রাইয়ের মামলা সেই ধারাবাহিকতাকে আরও শক্তিশালী করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু একজন তারকার ব্যক্তিত্বের অধিকার রক্ষার লড়াই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে ভারতের ডিজিটাল পরিসরে সেলিব্রিটিদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাও সামনে আনছে।
বিশ্বজুড়ে deepfake এবং AI-ভিত্তিক ভুয়ো ছবি-ভিডিও এখন বড় সমস্যা। অনেক সময় সাধারণ মানুষও এর শিকার হচ্ছেন। তবে তারকাদের ক্ষেত্রে প্রভাব আরও মারাত্মক, কারণ তাদের খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা অর্থনৈতিকভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা হয়। ফলে ঐশ্বর্য রাইয়ের মতো তারকারা আইনি পদক্ষেপ নিলে তা পুরো শিল্পের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই মামলা নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যেও আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ বলছেন, এটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ, কারণ ভবিষ্যতে আরও অনেক সেলিব্রিটিকে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আবার অনেকে মত দিয়েছেন, সরকারকেও আলাদা আইন আনতে হবে, যাতে ব্যক্তিত্ব ও প্রচার অধিকারের আইনি সুরক্ষা আরও দৃঢ় হয়।
সব মিলিয়ে, ঐশ্বর্য রাইয়ের এই মামলা শুধু ব্যক্তিগত লড়াই নয়, বরং ডিজিটাল যুগে নৈতিকতা, গোপনীয়তা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন মানদণ্ড তৈরি করতে পারে। আদালতের রায় কী হবে, তা এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
আরও পড়ুন :
মাঠেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারালেন পাকিস্তানের খেলোয়াড় মাখা জাট