Breaking News

Russian spy Anna Chapman

রাশিয়ার ‘গ্ল্যামারাস’ গুপ্তচর আন্না চ্যাপম্যানের নতুন মিশন

রাশিয়ার দৃষ্টিতে, আন্না চ্যাপম্যান এখন কেবল প্রাক্তন স্পাই নন — তিনি এক প্রতীক, যিনি দেশপ্রেম, নারীর শক্তি এবং গোপন যুদ্ধের গৌরব একসঙ্গে বহন করেন।

Russian spy Anna Chapman : এবার নতুন মিশনে রুশ সরকারের সঙ্গে

Russian spy Anna Chapman

ক্লাউড টিভি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার গোয়েন্দা ইতিহাসে বহু কিংবদন্তি নারী গুপ্তচরের নাম আছে। কিন্তু আন্না চ্যাপম্যান যেন সবার উপরে — একদিকে তাঁর সৌন্দর্য, অন্যদিকে গোপন চরবৃত্তির নাটকীয় ইতিহাস তাঁকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক আলোচিত মুখে পরিণত করেছে। এক দশকেরও বেশি সময় পরে এই ‘রেড হেয়ার্ড স্পাই’ ফের নতুন ভূমিকায় হাজির হয়েছেন। রাশিয়ার নতুন “ইন্টেলিজেন্স মিউজিয়াম”-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আন্না চ্যাপম্যান।

আন্না ভাসিলিয়েভনা কুশচেঙ্কো (Anna Vasilyevna Kushchenko) ১৯৮২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন রাশিয়ার ভলগোগ্রাদে। তাঁর বাবা ছিলেন প্রাক্তন কেজিবি কর্মকর্তা। কৈশোরেই বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পান এবং পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের লন্ডনে পাড়ি জমান। সেখানে একজন ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে করেন এবং তাঁর পদবি হয় “চ্যাপম্যান”।

তবে এই সুন্দরী রুশ তরুণী খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক গুপ্তচর জগতে নিজের জায়গা তৈরি করে ফেলেন।

২০০০–এর দশকের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় ছিল রাশিয়ার ‘স্লীপার সেল’ দের একটি দল। ২০১০ সালের জুন মাসে এফবিআই হানা দিয়ে ১০ জন রুশ গুপ্তচরকে একযোগে গ্রেপ্তার করে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন আন্না চ্যাপম্যান

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল — তিনি রুশ গোয়েন্দা সংস্থা SVR-এর হয়ে কাজ করতেন এবং আমেরিকার বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে অনুপ্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন।

তদন্তে জানা যায়, তিনি অত্যাধুনিক এনক্রিপ্টেড যোগাযোগব্যবস্থা ব্যবহার করতেন এবং নিয়মিতভাবে রুশ হ্যান্ডলারের সঙ্গে দেখা করতেন। এমনকি ‘ওয়্যারলেস ডেটা ট্রান্সফার’ ব্যবহারের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের পার্কে ল্যাপটপের সাহায্যে গোপন বার্তা পাঠাতেন।

২০১০ সালের ২৭ জুন এক গোপন বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ধরা পড়েন। তাঁকে এবং আরও নয়জন রুশ গুপ্তচরকে পরে আদালতে তোলা হয়।

মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে এক “স্পাই সোয়াপ” চুক্তি হয় — যুক্তরাষ্ট্র ১০ জন রুশ গুপ্তচরকে রাশিয়ায় ফেরত পাঠায়, বিনিময়ে রাশিয়া চারজন পশ্চিমি গোয়েন্দা মুক্তি দেয়।

এই ঘটনাটি ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী কালের সবচেয়ে বড় গুপ্তচর বিনিময় হিসেবে ইতিহাসে স্থান পায়।

রাশিয়ায় ফিরেই আন্না চ্যাপম্যান জাতীয় নায়িকার মর্যাদা পান। তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হয়, এমনকি যুব সংগঠন “Young Guard of United Russia” তাকে রাশিয়ার দেশপ্রেমিক প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করে।

চ্যাপম্যান মিডিয়ায় নিজের উপস্থিতি বাড়িয়ে দেন। তিনি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের মডেল হন, টেলিভিশন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এবং নিজের ব্যবসা শুরু করেন।

রাশিয়ার সরকারি মিডিয়ায় তাঁকে ‘আধুনিক নারীর প্রতীক’ হিসেবে ব্যবহার করা হয় — সুন্দরী, বুদ্ধিমতী এবং দেশের প্রতি বিশ্বস্ত।

২০২৫ সালে সংবাদমাধ্যম জানায়, রাশিয়া নতুন একটি “Museum of Russian Intelligence” তৈরি করছে, যেখানে রাশিয়ার গোয়েন্দা কার্যক্রমের ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হবে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আন্না চ্যাপম্যান।

তাঁর নতুন ভূমিকা মূলত রাশিয়ার “গোপন যুদ্ধের ইতিহাস” জনমানসে তুলে ধরা — যা পুতিন প্রশাসনের তথ্য-যুদ্ধের অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চ্যাপম্যানকে এই পদে বসানো একটি ‘কৌশলগত সিদ্ধান্ত’। এটি রাশিয়ার আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নারী-নেতৃত্বাধীন দেশপ্রেমিক ইমেজ তৈরি করছে।

আন্না চ্যাপম্যানের চরিত্র সবসময় দ্বৈততায় ভরা — একদিকে গ্ল্যামার, ফ্যাশন ও জনপ্রিয়তা; অন্যদিকে গোপনচরবৃত্তি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও গুপ্ত তথ্যের ছায়া।
তিনি ২০১১ সালে Maxim Russia ম্যাগাজিনের কভারেও আসেন। অনেকেই তাঁকে “Russia’s real-life Bond girl” বলে অভিহিত করেন।

ব্রাহ্মণদের মুনাফা অভিযোগে ভারতের ওপর নাভারোর আক্রমণ, রুশ তেলের অজুহাতে ৫০% শুল্কের পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসন

আমেরিকা ২১ লক্ষ কোটি ডলার ব্যয়ে গোপন বাঙ্কার নির্মাণ করেছে? প্রাক্তন সরকারি কর্তার বিস্ফোরক দাবি

এফবিআই কর্মকর্তারা পরে বলেন, “She was not the most dangerous spy — but she was the most visible.”
অর্থাৎ, তাঁর সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব গোটা গুপ্তচর রিংয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

রাশিয়ার দৃষ্টিতে, আন্না চ্যাপম্যান এখন কেবল প্রাক্তন স্পাই নন — তিনি এক প্রতীক, যিনি দেশপ্রেম, নারীর শক্তি এবং গোপন যুদ্ধের গৌরব একসঙ্গে বহন করেন।
বিশ্বের দৃষ্টিতে, তিনি প্রমাণ করেছেন — আধুনিক গুপ্তচরবৃত্তি এখন আর শুধুই বন্দুক বা কোড নয়, বরং প্রভাব, সামাজিক উপস্থিতি এবং মিডিয়ার শক্তি।

আরও পড়ুন :

ভারতীয় সেনার নতুন ‘ভৈরব’ ব্যাটালিয়ন: আধুনিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এলিট ইউনিট

বাংলাদেশে চীনা সহায়তায় তিস্তা নদী প্রকল্পে উত্তেজনা, ভারতের কৌশলগত উদ্বেগ

ad

আরও পড়ুন: