ChinaIndiaTensions BrahmaputraDam
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: তিব্বতের উজানে ব্রহ্মপুত্র নদে বিশালাকৃতির জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ শুরু করেছে চীন। গত শনিবার এই বাঁধ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং। বিশ্বের অন্যতম সংবেদনশীল নদী-প্রবাহ এবং প্রতিবেশের ওপর সম্ভাব্য গভীর প্রভাব ফেলতে চলা এই প্রকল্প নিয়ে আগে থেকেই উদ্বিগ্ন ভারত ও বাংলাদেশ। তবুও চীন তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নিচ্ছে (ChinaIndiaTensions BrahmaputraDam) বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া।
প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে তিব্বতের ইয়ারলুং জ্যাংপো নদীর ওপর, যা ভারতে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত এবং এরপর বাংলাদেশে যমুনা নামে গতি পায়। এই আন্তর্জাতিক নদীপ্রবাহে চীনের একতরফা বাঁধ নির্মাণ দক্ষিণ এশিয়ার জলসংস্থান, বাস্তুতন্ত্র এবং নিরাপত্তার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা।
দলাই লামার ছদ্মবেশে পালানোর নাটকীয় ইতিহাস: তিব্বতের প্রাসাদ থেকে ভারতের অভিমুখে এক বিপজ্জনক যাত্রা
দালাই লামার উত্তরসূরী ঘিরে নতুন যুগের সূচনা? ধর্মশালায় উত্তাল রাজনৈতিক-আধ্যাত্মিক আবহ, চিনে উদ্বেগ
সিনহুয়ার তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পে পাঁচটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৭.১ বিলিয়ন ডলার)। বাঁধটি সম্পূর্ণ হলে এটি হতে পারে চীনের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র—এমনকি ইয়াংসি নদীর ওপর নির্মিত থ্রি গর্জেস ডামকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে উৎপাদন ক্ষমতায়।
চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই প্রকল্প তিব্বতের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অন্যান্য প্রদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহেও সহায়তা করবে। সেইসঙ্গে, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের জাতীয় লক্ষ্যে অবদান রাখবে।
ভারত শুরু থেকেই এই বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “চীনের কার্যক্রম যাতে নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না করে, সে বিষয়ে চীনকে সতর্ক করা হয়েছে। ভারত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”
ভারতের আশঙ্কা, চীনের উজানে জলাধার নিয়ন্ত্রণ দক্ষিণ এশিয়ায় জলের প্রবাহ কমাতে পারে, যার প্রভাব পড়বে ভারতের অরুণাচল, অসম ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে জলপ্রবাহ কমে যাওয়া বা বর্ষায় হঠাৎ অতিরিক্ত জল ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা নতুন করে বন্যার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
চীনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, এই প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। পাশাপাশি চীন দাবি করেছে, তারা ভারতসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংলাপ বজায় রাখবে।
তবে শুধু ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, প্রকল্পটি নিয়ে পরিবেশবিদদেরও উদ্বেগ বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, হিমালয় এবং তিব্বতের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। সেখানে এ ধরনের মেগা প্রকল্প ভূমিধস, নদীভূমি ক্ষয় এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাছাড়া সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনেও বড়সড় প্রভাব পড়তে পারে।
আরও পড়ুন :
গান্ধীর একমাত্র স্বেচ্ছায় আঁকানো তৈলচিত্র নিলামে আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি