ClimateCrisis SouthFranceFire
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: দাবানলের আগুনে যেন ছারখার হয়ে যাচ্ছে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চল। ‘অড’ (Aude) অঞ্চলে ভয়াবহ দাবানলে (ClimateCrisis SouthFranceFire) ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন একজন, ধ্বংস হয়ে গেছে একাধিক ঘরবাড়ি। দাবানলের বিস্তার এতটাই ভয়ঙ্কর যে, প্যারিসের চেয়েও বড় একটি এলাকা এখন জ্বলন্ত আগুনের কবলে। গত ৮০ বছরের ইতিহাসে এত ভয়াবহ একক দাবানল দেখেনি ইউরোপের এই দেশ।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, সাঁ লরঁ দ্য লা ক্যাবরিস (Saint-Laurent-de-la-Cabrerisse) নামের একটি গ্রামে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পারপিনিয়াঁ (Perpignan) শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটিতে দাবানলের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং একজন বাসিন্দা আগুনে আটকা পড়ে মৃত্যুবরণ করেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) আগুন যখন জঙ্গলের ভেতর থেকে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন আতঙ্কে গ্রামবাসী ও পর্যটকরা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালাতে বাধ্য হন। বন্ধ করে দেওয়া হয় আশেপাশের বহু সড়ক। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। প্রায় ২৫০০ পরিবার এখন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
এক রাতেই নামতে পারে বছরের এক-তৃতীয়াংশ বৃষ্টি, মিয়ুন জেলায় বৃদ্ধাশ্রমে প্লাবনে ৪৪ জনের মৃত্যু
তুরস্কে ভয়াবহ দাবানল: ইজমিরসহ একাধিক প্রদেশে আগুন, ঘরবাড়ি ফেলে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা
দাবানল কবলিত এলাকা ঘুরে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু বলেন, “এটা নজিরবিহীন একটি দুর্যোগ। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যে মানুষজন পালানোর সময়ও পাচ্ছেন না।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার সবরকম সহায়তা দিচ্ছে এবং দমকল বাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। তবে পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত জটিল।”
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো জানান, ইতোমধ্যে ১৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যা বিগত কয়েক বছরে পুরো ফ্রান্সজুড়ে পোড়া জমির সমান। তিনি বলেন, “১৯৪৯ সালের পর এত বড় দাবানল আর হয়নি। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের এক ভয়ানক উদাহরণ।”
প্রায় দুই হাজার দমকল কর্মী এখন দিন-রাত পরিশ্রম করছেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র এরিক ব্রোকার্দি জানিয়েছেন, বাতাসের গতি ও উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে আগুনের বিস্তার আরও বাড়ছে। ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, “শুধু বন নয়, এখন গ্রামগুলোর দিকে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন। পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং পূর্বাভাসও ভালো নয়।”
আবহাওয়াবিদদের মতে, তীব্র গরম এবং শুকনো আবহাওয়া দাবানলের জন্য দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফ্রান্সে দাবানলের সংখ্যা ও তীব্রতা দুই-ই বাড়ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ফ্রান্সের অঞ্চলগুলো এখন বছরে একাধিকবার এমন দাবানলের মুখে পড়ছে।
আসন্ন দিনে বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্রান্সের সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে সহায়তা চেয়েছে। ইতিমধ্যেই স্পেন ও ইতালি থেকে অতিরিক্ত দমকল বাহিনী পাঠানোর আশ্বাস পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ এবং ২০২৩ সালেও ফ্রান্সে দাবানলে কয়েক হাজার হেক্টর বনাঞ্চল পুড়ে গিয়েছিল। তবে এবারের আগুন তার তুলনায় অনেক বেশি বিধ্বংসী। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “এই দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যই আমাদের শক্তি।”
আরও পড়ুন :
‘সবচেয়ে খারাপ মা’কে ২০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সরকার!
পোশাক শিল্পে ধস: উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা: অর্ডার বাতিল অ্যামাজন-ওয়ালমার্টের