Breaking News

NetajiSubhasChandraBose KeralaTextbookRow

“ব্রিটিশদের ভয়ে নেতাজি জার্মানিতে পালিয়ে যান”, বাম শাসিত কেরলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষকদের হ্যান্ডবুকে ছাপা হয়েছিল এই তথ্য

কেরলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষকদের হ্যান্ডবুকে ছাপা হয়েছিল— “ব্রিটিশদের ভয়ে জার্মানিতে পালান নেতাজি।” ব্যাপক সমালোচনার পর SCERT ভুল স্বীকার করে সংশোধন করেছে। দায়ীদের ভবিষ্যতের একাডেমিক কাজ থেকে বাদ দিয়েছে সরকার।

NetajiSubhasChandraBose KeralaTextbookRow Explained %%page%% %%sep%% %%sitename%%

NetajiSubhasChandraBose KeralaTextbookRow

ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে কেরলে। রাজ্যের শিক্ষাবিষয়ক দপ্তর SCERT (State Council of Educational Research and Training) চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষকদের জন্য প্রকাশ করা একটি ড্রাফ্ট টিচার্স হ্যান্ডবুক-এ এমন একটি বক্তব্য ছাপায়, যেখানে বলা হয়েছিল—
“Subhas Chandra Bose fled to Germany fearing the British.”
অর্থাৎ “ব্রিটিশদের ভয়ে নেতাজি জার্মানিতে পালিয়ে যান।”

এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলোও প্রবল আপত্তি তোলে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যান্ডবুকটির লক্ষ্য ছিল ছাত্রছাত্রীদের ইতিহাস সহজভাবে বোঝানো। কিন্তু সেখানে নেতাজিকে ঘিরে ভুল তথ্য ছাপা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য দেশত্যাগ, ভারতীয় জাতীয় সেনা গঠন এবং নাৎসি জার্মানি-জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ঘটনাগুলোকে ‘ব্রিটিশদের ভয়ে পালানো’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

৬৯, সূর্য সেন স্ট্রিটের ফেবারিট কেবিনে নেতাজিও আসতেন

স্বাধীনতা দিবসে মাংস বিক্রি নিষিদ্ধে ভারতের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক

ইতিহাসবিদ ও শিক্ষকেরা সঙ্গে সঙ্গে ভুল ধরিয়ে দেন এবং বলেন— এটি তথ্য বিকৃতি। কারণ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন অসাধারণ সাহসী ও দূরদর্শী নেতা। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই তীব্র করা, ভয়ে পালানো নয়।

  • শিক্ষক ও সমাজের প্রতিক্রিয়ার পর SCERT তৎক্ষণাৎ ভুল সংশোধন করে।

  • কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, এটি কেবল ড্রাফ্ট সংস্করণে ছিল, চূড়ান্ত বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

  • একই সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট সম্পাদক ও একাডেমিক টিমের সদস্যদের ভবিষ্যতের যেকোনো পাঠ্যক্রম বা হ্যান্ডবুক প্রণয়ন কাজ থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কেরল সরকার জানায়, “এটি একটি অগ্রহণযোগ্য ভুল, নেতাজির ইতিহাস বিকৃত হওয়ার সুযোগ নেই।”

  • ABVP (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) তীব্র সমালোচনা করে জানায়, শুধু নেতাজি নয়, আরও বেশ কিছু ভুল ছিল হ্যান্ডবুকে। যেমন— ভারতের মানচিত্রে অসম ও ঝাড়খণ্ডের নাম বাদ পড়েছিল।

  • কংগ্রেস ও সিপিআইএম নেতারাও সমালোচনা করে বলেছেন, এমন ভুল প্রমাণ করে যে কেরলের শিক্ষা দপ্তরে মান নিয়ন্ত্রণের বড়সড় ঘাটতি রয়েছে।

  • বিরোধী পক্ষের বক্তব্য, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছানো হচ্ছিল।

কেরল সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হবে না। যে সমস্ত একাডেমিক সম্পাদক ভুল করেছেন, তারা আর ভবিষ্যতে কোনো পাঠ্যপুস্তক সম্পাদনা বা প্রণয়নের দায়িত্ব পাবেন না।

শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন,
“এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি সতর্ক সংকেত। আমরা চাই না আগামী প্রজন্ম নেতাজির মতো বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে বড় হোক।”

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সবচেয়ে সাহসী ও অনন্য প্রতীক। তাঁর ‘তুমি আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাকে স্বাধীনতা দেব’ আহ্বান আজও অনুপ্রেরণার মন্ত্র। এমন এক নেতাকে “ভয়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তি” হিসেবে দেখানো শুধু ভুল নয়, বরং তাঁর আদর্শ ও আত্মত্যাগের অবমাননা।

কেরলের পাঠ্যপুস্তক বিতর্ক আবারও শিক্ষা দপ্তরের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ইতিহাসের সঙ্গে ছেদ টেনে যেকোনো ধরনের ভুল শিক্ষা কেবল বিতর্কই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চেতনার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সরকার আপাতত ভুল সংশোধন করেছে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে শিক্ষা মহলের দাবি— ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ভুল আর না হয়, তার জন্য আরও শক্তিশালী যাচাই ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

আরও পড়ুন :

বাসভবনে ঢুকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে চড়, দিল্লিতে নিরাপত্তা প্রশ্নে নতুন বিতর্ক

অবশেষে ব্রিটেন অ্যাপলের বিরুদ্ধে ‘ব্যাকডোর’ নির্দেশ প্রত্যাহার করল

ad

আরও পড়ুন: