kolhapuri chappal prada
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ইতালির বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড প্রাদা সম্প্রতি তাদের ২০২৬ সালের স্প্রিং/স্যামার মেনসওয়্যার কালেকশনে একটি চপ্পল বাজারে আনে, যা দেখতে ভারতের ঐতিহ্যবাহী কলহাপুরি চপ্পলের মতো (kolhapuri chappal prada)। যদিও প্রথমদিকে তারা এর কোনও উৎসদেশীয় স্বীকৃতি দেয়নি, কিন্তু ব্যাপক সমালোচনা, সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার এবং ভারতীয় সমাজের চাপের মুখে পড়ে অবশেষে প্রাদা স্বীকার করে নেয় যে এই ডিজাইন ভারতীয় হস্তশিল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত।
কেন এত বিতর্ক?
প্রাদার স্যান্ডাল দেখতে ছিল হুবহু কলহাপুরি চপ্পলের মতো — চামড়ার তৈরি, খোলা পায়ের ডিজাইন, পায়ের পাতার উপর বেঁধে রাখার কাঠামো — এবং মূল মূল্য ৮৪৪ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
এই স্যান্ডালগুলোর মূল ঐতিহ্য মহারাষ্ট্রের কলহাপুর অঞ্চলের। প্রায় ৮০০ বছর ধরে ভারতীয় চর্মশিল্পীরা হাত দিয়ে তৈরি করে আসছেন এই চপ্পল। এগুলোর রয়েছে ভৌগলিক স্বীকৃতি (GI Tag)। এরকম একটি ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে প্রাদা যখন নিজেদের ডিজাইন বলে বাজারজাত করতে থাকে, তখনই তৈরি হয় বিতর্ক।
দালাই লামার উত্তরসূরী ঘিরে নতুন যুগের সূচনা? ধর্মশালায় উত্তাল রাজনৈতিক-আধ্যাত্মিক আবহ, চিনে উদ্বেগ
কান চলচ্চিত্র উৎসবে নতুন বিধিনিষেধ: পোশাকে নগ্নতা, অতিরিক্ত দৈর্ঘ্য ও বড় ব্যাগ নিষিদ্ধ
ভারতীয় প্রতিক্রিয়া: ‘স্রেফ ডিজাইন নয়, সংস্কৃতির অপমান’
সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল হয় #KolhapuriChappals ও #CulturalAppropriation হ্যাশট্যাগে।
শিল্পীরা বলেন — “একটা চপ্পল নয়, এ আমাদের সংস্কৃতি, শ্রম, জীবনযাত্রার প্রতীক।”
অনেকেই লিখেন — “আপনি ১০০ গুণ দামে আমাদের ঐতিহ্য বিক্রি করছেন, অথচ নামটি পর্যন্ত উল্লেখ করছেন না!”
মহারাষ্ট্রের নেতারা, যেমন বিজেপি যুব মোর্চার কৃষ্ণরাজ মাহাদিক, বলেন, “আমরা আইনত জবাব চাই।”
সরকারি ও শিল্প সংগঠনের ভূমিকা
মহারাষ্ট্র চেম্বার অফ কমার্স এবং কলহাপুরি চর্মশিল্পীদের সংগঠন যৌথভাবে প্রাদার বিরুদ্ধে নোটিশ দিতে প্রস্তুতি নেয়।
তারা ভবিষ্যতের জন্য শিল্প-স্বত্ব অধিকার (IPR) ও প্রতিরক্ষা নীতির দাবি তোলেন।
প্রাদার ব্যাখ্যা ও ক্ষমাপ্রার্থনা
প্রাদার CSR প্রধান লরেঞ্জো বের্তেল্লি একটি খোলা চিঠিতে বলেন:
“আমরা স্বীকার করছি, প্রাদার সাম্প্রতিক স্যান্ডাল ডিজাইন ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী চর্মশিল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত। এটি একটি প্রাথমিক ধারণা ছিল, যা আমরা সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে আরও ভালভাবে উপস্থাপন করতে চাই।”
তারা আরও জানান, ভবিষ্যতে স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে সহযোগিতায় কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে এখনও কোনও আর্থিক ভাগ বা পার্টনারশিপ চুক্তি হয়নি।
দামের বৈষম্য ও প্রশ্ন
ভারতে এই চপ্পল বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা দামে।
প্রাদা সেটিই দিচ্ছে ৭০,০০০ টাকায়!
প্রশ্ন ওঠে, এই অতিরিক্ত দামে কি স্থানীয় কারিগরের শ্রমের কোনো অংশ পৌঁছচ্ছে?
বুলগারির মঙ্গলসূত্র, গুচ্চির বানারসি শাড়ি অনুপ্রেরণা – সবই আগে বিতর্কে এসেছে।
পশ্চিমা ফ্যাশন হাউসগুলো প্রায়শই ভারতীয় ঐতিহ্য ব্যবহার করলেও স্বীকৃতি, লাভ ভাগাভাগি বা শিল্পীর নাম প্রায় আসে না।
এই ঘটনাগুলো দেখায় গ্লোবাল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সাংস্কৃতিক পরাক্রম আর বাণিজ্যিক লোভের সংঘাত।
এখন প্রশ্ন:
প্রাদা কি শুধুই বিবৃতি দিয়ে থেমে যাবে?
নাকি ভারতীয় শিল্পীদের সহযোগী করে প্রকৃত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে?
ভারত সরকার কি সাংস্কৃতিক সম্পত্তি রক্ষায় নতুন আইনি কাঠামো গড়বে?
‘স্যান্ডাল স্ক্যান্ডাল’ শুধুমাত্র একটি বিতর্ক নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক দাবির পুনরুত্থান। ভারতে শতাব্দীপ্রাচীন হস্তশিল্পের প্রাপ্য সম্মান ও অর্থনৈতিক প্রাপ্তির প্রশ্নকে সামনে আনে এটি। প্রাদা যেমন অবশেষে স্বীকৃতি দিয়েছে, তেমনি আশা, ভবিষ্যতে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো অনুপ্রেরণার সঙ্গে অংশীদারিত্বকেও গুরুত্ব দেবে।
এটি ভারতীয় শিল্পীদের জন্য সম্মান ফিরিয়ে আনার লড়াই। আর ফ্যাশনের নামে সংস্কৃতির ‘মুনাফা কৌশল’কে চ্যালেঞ্জ জানানো সময় এসেছে।
আরও পড়ুন :
বিশ্বযুদ্ধের ছায়া? ইউক্রেনে রাশিয়ার সবচেয়ে বড়ো আকাশ হামলা, নিহত F-16 পাইলট
এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হলেন সৃজন ভট্টাচার্য, সভাপতি আদর্শ এম সাজি