দিল্লি যমুনা বন্যা সতর্কতা ২০২৫
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : দিল্লি ও আশেপাশের এনসিআর (NCR) অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, কারণ অবিরাম বর্ষণ এবং হরিয়ানার হাথনিকুন্ড ব্যারেজ থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে যমুনা নদীর জলস্তর (দিল্লি যমুনা বন্যা সতর্কতা ২০২৫) দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে ওল্ড রেলওয়ে ব্রিজে মাপ নেওয়া হলে দেখা যায়, নদীর স্তর বিপদসীমা ২০৫.৩৩ মিটার ছাড়িয়ে ২০৫.৭৫ মিটারে পৌঁছেছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি বিপজ্জনক। ফলে প্রশাসন উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে এবং বন্যাপ্রবণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
এদিকে, গুরুগ্রামে টানা বৃষ্টিতে জলজমা চরমে পৌঁছেছে। প্রশাসন জরুরি বৈঠক করে জানিয়েছে যে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ এবং অনেক অফিস বন্ধ থাকবে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ শহরের বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু-সমান জল জমে গেছে এবং রাস্তায় গাড়ি চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে নাগরিক জীবনে ভয়ঙ্কর অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
MaldaFloods : মালদায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা ও ফুলহর, রতুয়া-১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন
উত্তরবঙ্গে টানা ভারী বৃষ্টি, দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা—আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস
একই সঙ্গে দিল্লি, নয়ডা ও গাজিয়াবাদসহ সমগ্র এনসিআরে যানবাহন চলাচলে প্রবল বিঘ্ন ঘটেছে। ব্যস্ততম রাস্তাগুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগে থাকছে। বিমানবন্দরেও একাধিক ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ছে বা বাতিল হচ্ছে। এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের সতর্ক করেছে, কারণ বিমানবন্দর সংযোগকারী রাস্তাগুলোতেও জল জমে গেছে।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) দিল্লি-এনসিআরের জন্য ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করেছে এবং জানিয়েছে যে আগামী ২৪ ঘণ্টাতেও প্রবল বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যমুনার জলস্তর যদি ২০৬ মিটার অতিক্রম করে তবে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সেই কারণে, প্রশাসন ইতিমধ্যেই এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ-এর টিম মোতায়েন করেছে।
ইতিমধ্যেই দিল্লির মজদুর কলোনি, কাশ্মীরি গেট, মজনু কা টিলা এবং যমুনা বাজার এলাকার বাসিন্দাদের সরানোর জন্য মাইকিং শুরু হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা নৌকা ও অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এখনও নদীর জলস্তর বিপদসীমার সামান্য ওপরে রয়েছে। তবে, বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এবং ব্যারেজ থেকে জল ছাড়তে থাকায় আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছি না।”
গুরুগ্রামের বাসিন্দারা আবারও প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এত বছর ধরে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করা হলো না। প্রতিবার বর্ষাকালে একই সমস্যা তৈরি হয়, অথচ কার্যকর সমাধান আজও দেখা যায়নি। দিল্লির মানুষও ১৯৭৮ সালের ভয়ঙ্কর বন্যার কথা মনে করছেন, যখন যমুনার জল বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছিল। সেদিনের মতো পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে কিনা, তা নিয়েই জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে যাচ্ছে এবং অল্প সময়ে অতিরিক্ত বর্ষণ শহরের পরিকাঠামোকে ভেঙে ফেলছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম ও জলাধার প্রকল্প তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া উচিত। যদিও আপাতত মূল লক্ষ্য হলো প্রাণ ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
সব মিলিয়ে, দিল্লি ও এনসিআরের মানুষ এক অনিশ্চিত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন ও নাগরিক সমাজ উভয়েই এখন কেবল প্রার্থনা করছে, যাতে যমুনার জল দ্রুত নেমে যায় এবং ভয়ঙ্কর বিপর্যয় এড়ানো যায়। তবে, পরিস্থিতি উন্নত হবে নাকি আরও খারাপ হবে, তা নির্ভর করছে আগামী কয়েক দিনের বর্ষণের ওপর।
আরও পড়ুন :
বনগাঁ লোকাল AC, পুজোর আগে শিয়ালদহ শাখার যাত্রীদের জন্য সুখবর
নিউজ রিপোর্ট: আমরা কুকুরের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি: প্যালেস্টাইন নাগরিক