কিয়ের স্টার্মার ভারত সফর
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতের মাটিতে পা রাখলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। সোমবার সকালে মুম্বাই বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। এই সফর তাঁর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম ভারত সফর, ফলে দুই দেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক মহলে এর তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুম্বাই বিমানবন্দরে স্টার্মারকে স্বাগত জানান মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসসহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।বিমানবন্দরেই তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিনিধিরাও।এর মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে ভারত-ইউকে কূটনৈতিক বন্ধনের নতুন অধ্যায়।
এই সফরের প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে— ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (FTA) বাস্তবায়ন ও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা।সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি প্রাথমিক চুক্তি গৃহীত হয়েছে, যা বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।স্টার্মারের সফরে এই চুক্তি চূড়ান্ত রূপ পেতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রের দাবি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুম্বাই এসেছেন প্রায় ৩০ জন বিশিষ্ট ব্রিটিশ উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি।তাঁদের লক্ষ্য, ভারতের দ্রুতবর্ধনশীল বাজারে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুঁজে বের করা।স্টার্মার নিজেও বলেছেন, “ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শুধু কূটনীতির নয়, এটি দুই দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির ভিত্তি।”
সূত্র অনুযায়ী, স্টার্মার বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।এই বৈঠকে মুক্ত বাণিজ্য, অবকাঠামো, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।বিশেষত, ভারতের সেমিকন্ডাক্টর ও গ্রিন এনার্জি প্রকল্পে ব্রিটিশ বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে কথাবার্তা হতে পারে।
দুই দেশের মধ্যে “Vision 2035 Partnership” কাঠামোয় এই আলোচনাগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।এর আওতায় আগামী দশকে দুই দেশের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই সফরকে কেন্দ্র করে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, যুক্তরাজ্যের নতুন সরকার ভিসা নীতিতে কোনও শিথিলতা আনবে।
তবে কিয়ের স্টার্মার স্পষ্ট জানিয়েছেন—
“এই সফর ভিসা বা অভিবাসন নিয়ে নয়, বরং পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে, কিন্তু অভিবাসন নীতি আলাদা বিষয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্টার্মারের এই সফর মূলত চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে ভারসাম্য রাখতে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা। ব্রিটেনও এখন “Global South”-এর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যার নেতৃত্বে রয়েছে ভারত।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত সফরকে পশ্চিমা বিশ্ব ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের “Recalibration Moment” হিসেবে দেখছে।
পুতিন-জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদির বৈঠককে ‘লজ্জাজনক’ বলল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ব্রিটিশ নয়, ভারতীয় সেনারাই হাইফা মুক্ত করেছিলেন, ইজরায়েলের শিক্ষা দফতরের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
অন্যদিকে, ইউরোপের বাজারে মন্দা ও ব্রেক্সিট-পরবর্তী আর্থিক চাপে যুক্তরাজ্য এখন নতুন বাণিজ্য অংশীদার খুঁজছে। ভারত সেই তালিকার শীর্ষে। সুতরাং, এই সফর কেবল প্রতীকী নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে উভয় দেশের অর্থনৈতিক রণকৌশলের অংশ।
স্টার্মার মুম্বাইয়ে ভারতের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী টাটা, রিলায়েন্স, মহিন্দ্রা ও আদানির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তি, ফিনটেক ও ডিজিটাল সার্ভিস সেক্টরে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন।অন্যদিকে, ভারতীয় সংস্থাগুলি যুক্তরাজ্যে প্রযুক্তি ও পরিষেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী।
আরও পড়ুন :
রেলের বড় ঘোষণা: কনফার্ম টিকিটের তারিখ এখন থেকে অনলাইনে পরিবর্তন করা যাবে
গঙ্গাসাগরের মহিষামারিতে নদী বাঁধ ভাঙন: পরিদর্শনে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা