EuropeHeatwave
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: ইউরোপজুড়ে ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ দাবদাহ (EuropeHeatwave), যার ভয়াবহতা এবার মৃত্যুর মিছিলে রূপ নিয়েছে। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ইউরোপের অন্তত ১২টি শহরে দাবদাহে প্রাণ হারিয়েছেন ২,৩০০ জন মানুষ। একটি প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, এর মধ্যে প্রায় ১,৫০০টি মৃত্যু সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
গত ২২ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত সময়কালে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল ও ইতালির মতো দেশগুলোতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। এই ভয়াবহ গরমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রবীণ নাগরিক ও শিশু, যাদের দেহ সহজে তাপমাত্রার পরিবর্তনে মানিয়ে নিতে পারে না।
গবেষণায় কি উঠে এসেছে?
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা ইউরোপের ১২টি শহরকে কেন্দ্র করে একটি জরিপ চালান। এতে দেখা যায়, দাবদাহের সময়কালে অতিরিক্ত মৃত্যুহারের সঙ্গে সরাসরি উচ্চ তাপমাত্রার সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ইতালির মিলান শহর ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে এককভাবে ৪৯৯টি মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৭টি মৃত্যু ঘটেছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই— অর্থাৎ এটি ঠেকানো সম্ভব হতো যদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত।
ফ্রান্সের লিয়ঁ, স্পেনের মাদ্রিদ এবং পর্তুগালের লিসবন শহরেও উল্লেখযোগ্য হারে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অনেক হাসপাতালে স্থান সংকট, হিটস্ট্রোক ও ডিহাইড্রেশনে ভোগা রোগীদের উপচে পড়া ভিড়— গোটা ইউরোপ যেন এক মেডিকেল সংকটের সম্মুখীন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট ভবিষ্যতে আরও গুরুতর আকার নিতে পারে যদি জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য গবেষক ড. হ্যারি মিলার বলেন, “এখন আর প্রশ্ন নয় কেন মৃত্যু হচ্ছে— বরং প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কী করছি এগুলো রোধ করতে? এই মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু আমরা সময় হারিয়ে ফেলছি।”
আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভেঙে যেতে পারে সব তাপমাত্রা রেকর্ড: ডব্লিউএমওর সতর্কবার্তা
জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবস্বাস্থ্য
বিশ্বজুড়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে দাবদাহ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। বায়ু দূষণ, খাদ্য সংকট ও পানির ঘাটতির পাশাপাশি এখন এই ‘হিটওয়েভ’ বা তাপপ্রবাহ বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর কেবল ইউরোপেই দাবদাহে প্রাণ হারাবে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ, যদি কার্বন নিঃসরণ ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার এভাবেই চলতে থাকে।
কী বলছে প্রশাসন?
ইতোমধ্যে ইউরোপের একাধিক শহরে ‘হিট এমার্জেন্সি প্ল্যান’ সক্রিয় করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়গুলো জনগণকে ঘরে থাকার, প্রচুর পানি পান করার এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। পাশাপাশি বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদের বিশেষ নজরদারিতে রাখার জন্য চিকিৎসাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে বহু পরিবেশবাদী সংগঠন বলছে, এগুলো তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ, কিন্তু প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশনীতি এবং বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তিগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন।
আরও পড়ুন :
এবার রাস্তায় নামছেন ইমরান খানের দুই ছেলে, আন্দোলনে নামছে গোটা পরিবার