FaujaSingh OldestMarathonRunner
ক্লাউড টিভি স্পোর্টস ডেস্ক : ম্যারাথন দৌড়ের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম—ফৌজা সিং। ১১৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। সোমবার বিকেলে পাঞ্জাবের জলন্ধরের বিয়াস পিন্ড গ্রামে একটি অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন তিনি এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন (FaujaSingh OldestMarathonRunner)।
১৯১১ সালের ১ এপ্রিল জন্ম নেওয়া ফৌজা সিং বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়েছিলেন তার অদম্য মনোবল, জেদ ও দৌড়ের প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে। যা তাকে শুধুমাত্র একজন দৌড়বিদ নয়, এক জীবন্ত কিংবদন্তিতে রূপান্তরিত করেছিল।
৮৯ বছর বয়সে শুরু দৌড়জীবন, বদলে দিলেন জীবনের সংজ্ঞা
যখন অধিকাংশ মানুষ বৃদ্ধ বয়সে বিশ্রাম খোঁজেন, তখন ফৌজা সিং বেছে নিয়েছিলেন দৌড়ের পথ। স্ত্রী জ্ঞান কৌরের মৃত্যু, পরিবারের অন্য সদস্যদের হারানোর শোক এবং গভীর মানসিক অবসাদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং ইলফোর্ডের পার্কে হাঁটাহাঁটি শুরু করেন। এখান থেকেই শুরু এক নতুন জীবনের। একসময় হাঁটার জায়গায় দৌড় এল।
পরে ম্যারাথন কোচ হরমন্দর সিং-এর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি দৌড়কে ব্যবহার করেন দাতব্য কাজের মাধ্যম হিসেবে। ২০০১ সালে ৮৯ বছর বয়সে লন্ডন ম্যারাথনে প্রথমবার অংশগ্রহণ করেন তিনি। ৬ ঘন্টা ৫৪ মিনিট সময় নিয়ে তিনি সফলভাবে শেষ করেন ৪২.২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দৌড়। সেই সময় তিনি ৮৫+ বিভাগে পূর্ববর্তী রেকর্ডকে প্রায় ভেঙে দেন। এখান থেকেই শুরু ফৌজার দৌড়জীবনের প্রকৃত যাত্রা।
১০০ বছর বয়সে পূর্ণ ম্যারাথনের ইতিহাস গড়েন
২০১১ সালে, বয়স যখন ১০০, ফৌজা সিং টরন্টো ওয়াটারফ্রন্ট ম্যারাথনে অংশ নেন এবং ৮ ঘন্টা ১১ মিনিট সময় নিয়ে শেষ করেন কোর্স। তিনি হয়ে ওঠেন পূর্ণ ম্যারাথন সম্পন্নকারী বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি।
২০১২ সালে তিনি লন্ডনে শেষবারের মতো ম্যারাথনে দৌড়ান। সেখানে তার সময় লাগে ৭ ঘন্টা ৪৯ মিনিট। তবে দৌড় বন্ধ হলেও থেমে থাকেননি ফৌজা। ২০১৩ সালে হংকংয়ে ১০ কিলোমিটার দৌড়ে অংশ নিয়ে শেষ প্রতিযোগিতামূলক রেসে দৌড়ান তিনি।
২০১২ সালের পর থেকে ফৌজা দীর্ঘ ম্যারাথনে অংশ না নিলেও, নিয়মিত দৌড়বিদদের সঙ্গে দেখা করতেন, অনুপ্রেরণা জোগাতেন এবং উৎসাহ দিতেন। বয়স তাকে থামাতে পারেনি; বরং সময়ের সঙ্গে আরও বেশি স্পষ্ট হয়েছিল তার দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস।
‘টার্বানড টর্নেডো’ – এক জীবন্ত কিংবদন্তি
তার জীবনীগ্রন্থ ‘টার্বানড টর্নেডো’-তে উঠে এসেছে কীভাবে শৈশবে শারীরিকভাবে দুর্বল ফৌজা সিং পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত হাঁটতেই পারতেন না। অথচ পরবর্তীকালে তিনিই হয়ে উঠলেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ দৌড়বিদ।
২০০১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তিনি মোট ৯টি পূর্ণ ম্যারাথন দৌড়েছেন—লন্ডন ম্যারাথনে ছয়বার, টরন্টো ম্যারাথনে দুবার এবং নিউ ইয়র্ক ম্যারাথনে একবার।
একবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফৌজা বলেছিলেন,
“প্রথম ২০ মাইল কঠিন নয়। শেষ ছয় মাইলের কথা বলতে গেলে, আমি ঈশ্বরের সাথে কথা বলার সময় দৌড়াই।”
সম্মাননা ও উত্তরাধিকার
ফৌজা সিং অ্যাডিডাসের ‘ইম্পসিবল ইজ নথিং’ ক্যাম্পেইনের অন্যতম মুখ ছিলেন। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের জন্য তাকে অলিম্পিক মশাল বহনের জন্য বেছে নেওয়া হয়। ২০১৫ সালে খেলাধুলা ও দাতব্য কাজে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ব্রিটিশ এম্পায়ার মেডেল (BEM)-এ ভূষিত করা হয়।
ফৌজা সিং শুধু একজন ম্যারাথন দৌড়বিদ নন, তিনি প্রমাণ করে গেছেন—মনোবল, অধ্যবসায় এবং জীবনকে ভালোবাসার শক্তি থাকলে বয়স কেবল একটি সংখ্যা মাত্র।
আরও পড়ুন :
বয়সকে যেন হার মানিয়েছেন কারিনা, কি ভাবে, জানালেন পুষ্টিবিদ ঋজুতা দিওয়েকার
পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পিছনে পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব