SonamRajaCase
ইন্দোর – শিলং – ৯ জুন ২০২৫ : ভারতের মেঘালয় রাজ্যে সদ্য বিবাহিত এক ইন্দোরের ব্যবসায়ীকে হানিমুন ট্রিপে নিয়ে গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করানোর অভিযোগ উঠেছে তার নববিবাহিতা স্ত্রীর বিরুদ্ধে (SonamRajaCase)। এ ঘটনায় স্ত্রী সহ মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই চাঞ্চল্যকর মামলাটি এখন ‘হানিমুন হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছে।
২৩ মে, রাজা রঘুবংশী ও তার স্ত্রী সোনাম বিবাহের কয়েক দিনের মধ্যেই হানিমুনের উদ্দেশ্যে মেঘালয়ের শিলং ও চেরাপুঞ্জিতে যান। কিন্তু এরপর থেকেই রহস্য ঘনীভূত হতে থাকে। দু’জনকেই নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়। পরে ২ জুন চেরাপুঞ্জির এক গভীর গিরিখাত থেকে রাজার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ময়নাতদন্তে জানা যায়, রাজাকে ধাক্কা মেরে গিরিখাতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে থাকা স্কুটারটি আলাদা জায়গায় পাওয়া যায়, যা পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ায়। মেঘালয় পুলিশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম এবং শিলং পুলিশের তৎপর তদন্তে সামনে আসে রুদ্ধশ্বাস তথ্য। রাজাকে হত্যার ছক করেছিলেন তাঁরই স্ত্রী সোনাম, এবং এই কাজে সহায়তা করেছিল আরও তিন ভাড়াটে খুনি।মেঘালয়ের পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে এমন প্রমাণ মেলে যা স্পষ্ট করে দেয়—এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত। শিলংয়ের বিভিন্ন হোটেল, রাস্তার CCTV ফুটেজ, মোবাইল লোকেশন এবং ফোন কল রেকর্ডের সূত্র ধরেই পুরো চক্রান্ত ফাঁস হয়।
কাশ্মীরে বিশ্বের সর্বোচ্চ ও দুর্গম রেলসেতু জয়ের নেপথ্যে কে এই মাধবী লতা?
মেঘালয় পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে সোনাম এবং তিনজন পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোনাম রঘুবংশী: প্রধান অভিযুক্ত, স্বামীকে খুনের পরিকল্পনাকারী।
রজত, মনোজ, সজীব: সোনামের পরিচিত, তারাই পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজাকে হত্যা করে।
এই চারজনকেই বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
মেঘালয়ের পুলিশ কমিশনার আই. নঙরাং জানিয়েছেন,
“এই মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও জটিল। প্রথমে নিখোঁজ মামলা হিসেবে শুরু হলেও, ধাপে ধাপে তথ্য বেরিয়ে আসার পর এটি স্পষ্ট হয় যে এটি একটি পরিকল্পিত খুন। সোনাম নিজেই মূলচক্রী। আমরা যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
তদন্তকারীদের অনুমান, পারিবারিক কলহ, সম্পত্তিগত স্বার্থ অথবা অতীত সম্পর্কের কারণে সোনাম এই হত্যার ছক কষতে পারেন।
বলা হচ্ছে, সোনাম ইন্দোরে রাজা রঘুবংশীর বিপুল সম্পত্তির একজন স্বত্বাধিকার হতে চেয়েছিলেন। এই কারণে একমাত্র বাধা স্বামীকেই সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
রাজার পরিবারের দাবি,
“সোনামের বিরুদ্ধে কঠিনতম শাস্তি চাই। আমাদের ছেলেকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। এটি শুধু খুন নয়, বিশ্বাসঘাতকতাও।”
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—”আজকাল কি বিয়ের অঙ্গীকার এতটাই ঠুনকো?”এই মামলায় IPC-র 302 (হত্যা), 120B (ষড়যন্ত্র) সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ কোর্টে এই চার অভিযুক্তের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে।তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে এই মামলায় CBI অথবা ইন্টারস্টেট জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিমও গঠন করা হতে পারে।
একটি স্বপ্নের সফর রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। যাকে জীবনসঙ্গী ভেবেছিলেন, সেই হয়ে উঠল মৃত্যুদূত। এই ঘটনা যেন একটি ভয়ানক বার্তা — সম্পর্কের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ষড়যন্ত্র অনেক সময় জীবন কেড়ে নিতে পারে। এখন অপেক্ষা, আদালতের কাঠগড়ায় কী শাস্তি পায় এই হত্যাকারীরা।
আরও পড়ুন :