Gaza Hostage Release phase 2
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে ফের আশার আলো। হামাস দ্বিতীয় দফায় ১৩ জন ইজরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। রেড ক্রসের তত্ত্বাবধানে তাদের ইজরায়েলে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর রাতভর তেল আভিভে উৎসবের আবহ। পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ দুই বছরের পর সাক্ষাতে অশ্রুসজল পুনর্মিলন ঘটে।
ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে দ্বিতীয় দফায় এই বন্দি মুক্তির কাজ সম্পন্ন হয়।
বন্দিদের প্রথমে রাফা সীমান্তে রেড ক্রসের হাতে তুলে দেয় হামাস। এরপর মেডিকেল টিমের সহায়তায় তাদের আনা হয় ইজরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে।
রেড ক্রস জানিয়েছে, এই মুক্তি প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয় হয়েছে।প্রত্যেক বন্দিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং পরে তাদের পরিবারে পাঠানো হয়।
এর আগে প্রথম দফায় ৭ জন ইজরায়েলি বন্দি মুক্তি পেয়েছিলেন। তারা ইতিমধ্যেই পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়েছেন।ফলে এখন পর্যন্ত মোট ২০ জন জীবিত বন্দি ইজরায়েলে ফিরে এসেছে।
ইজরায়েলের রাজধানী তেল আভিভ, জেরুজালেম ও হাইফায় সর্বত্রই উৎসবমুখর পরিবেশ। পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন চোখে জল ও হাতে ফুল নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে বহু ভিডিও, যেখানে মা সন্তানের গলায় জড়িয়ে কাঁদছেন, আবার কেউ নীরবে হাত ধরে বসে আছেন — যেন স্বপ্নের মতো এক মুহূর্ত।
মুক্তিপ্রাপ্ত এক বন্দির মা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেন,
“দুই বছর পর ছেলেকে আলিঙ্গন করতে পেরেছি। এটা জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার।”
এই মুক্তি কোনও একক ঘটনা নয়। এটি একটি বৃহৎ যুদ্ধবিরতি ও বন্দি-বিনিময় চুক্তির অংশ। ইজরায়েল সম্মত হয়েছে যে, প্রতিটি ইজরায়েলি বন্দির বিনিময়ে প্রায় ১,৯০০ প্যালেস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে। এছাড়া গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
I share the joy of the families and of the Israeli people as seven hostages have just been handed over to the Red Cross. My team and I had recently met their parents.
Eitan Mor, Gali and Ziv Berman, Matan Angrest, Omri Miran, Alon Ahel and Guy Gilboa-Dalal are safe.…
— Emmanuel Macron (@EmmanuelMacron) October 13, 2025
এই চুক্তিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায়। দুই দেশই গোপন আলোচনার মাধ্যমে ইজরায়েল ও হামাসকে একই টেবিলে বসাতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, দুই বছর ধরে চলে আসা সংঘাতের মাঝে এটি প্রথমবারের মতো একটি কার্যকর শান্তি প্রচেষ্টা।
তবে শান্তির পথ এখনও দীর্ঘ। হামাসের এক মুখপাত্র জানায়, “যুদ্ধবিরতি সাময়িক, ইজরায়েলের আচরণের ওপরই নির্ভর করবে এর স্থায়িত্ব।” অন্যদিকে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমরা প্রত্যেক নাগরিককে ফিরিয়ে আনব। তবে নিরাপত্তা রক্ষায় কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।”
অবশেষে হামাসের হাত থেকে মুক্তি ইজরায়েলি বন্দিদের, দুই বছরের বন্দিদশার অবসানে উচ্ছ্বাস তেল আভিভে
ভেজিটেরিয়ান যাত্রীকে “মাংস বাদ দিয়ে খেতে” বলায় মৃত্যু! কাতার এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে মামলা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বন্দি বিনিময়ের পরেও সংঘাতের মূল কারণগুলো রয়ে গেছে — যেমন গাজার মানবিক সংকট, দখলনীতি, ও রাজনৈতিক অবিশ্বাস। এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতি যদি স্থায়ী না হয়, তবে হিংসা আবারও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বন্দি মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, “এটি মানবতার জয়, কিন্তু স্থায়ী শান্তির জন্য আরও উদ্যোগ প্রয়োজন।”
ওয়াশিংটন থেকেও বার্তা এসেছে— যুক্তরাষ্ট্র এই বন্দি মুক্তি প্রক্রিয়ায় কাতার ও মিশরের ভূমিকা প্রশংসা করছে।তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গাজার বাকি বন্দিদের অবস্থা এখনো ভয়াবহ। অনেকেই এখনও নিখোঁজ, কেউ কেউ চিকিৎসা বা খাবারের অভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে।
আরও পড়ুন :