HAL UAC SJ100 Production India
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা ও বিমান প্রযুক্তি সংস্থা HAL এবং রাশিয়ার United Aircraft Corporation-এর মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী Sukhoi Superjet-100 বা SJ-100 যাত্রীবিমান ভারতে লাইসেন্সের মাধ্যমে উৎপাদন হবে। এটি ভারতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ যাত্রীবিমান উৎপাদন প্রকল্প।
এই মডেলটি মূলত রিজিওনাল জেট ক্যাটাগরিতে পড়ে। এর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সাধারণত ৮৫-১০০ জন।ভারতের অভ্যন্তরীণ সংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এই প্রকল্পকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকার মনে করছে, দেশের বিমান চলাচল বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
HAL জানায়, এই প্রকল্প ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচির একটি বড় পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বেসামরিক বিমান খাতে ভারত প্রথমবার আন্তর্জাতিক মাত্রায় উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় প্রবেশ করবে।
বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি রুটে ভারতীয় এয়ারলাইনগুলির বহরে নিজস্ব উৎপাদিত বিমান যুক্ত হওয়া একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবুও, এখানে উল্লেখযোগ্য বিতর্কও রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান বিশেষজ্ঞদের মতে, Sukhoi Superjet-100 অতীতে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত ও সুরক্ষা-সংক্রান্ত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। বিভিন্ন বৈমানিক নিরাপত্তা রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মডেলের ১৪ বছরে প্রায় ৯৫টি ছোট-বড় ইনসিডেন্ট ঘটেছে বলে দাবি উঠে।
এজন্য প্রকল্প ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনার ঢেউও দেখা যায়। নিরাপত্তা রেকর্ড, যন্ত্রাংশ সরবরাহ, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন এবং মেইনটেন্যান্স সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
যদিও HAL ও রুশ নির্মাতারা বলছে, নতুন সংস্করণে পুরনো সমস্যাগুলি সমাধান করা হয়েছে।
কারিগরি দিক দিয়েও প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে বিমান ইঞ্জিন, অ্যাভিওনিক্স, কম্পোজিট স্ট্রাকচার এবং সার্ভিস-ইঞ্জিনিয়ারিং-সাপোর্ট তৈরি হবে। এর ফলে বহু দক্ষ চাকরি সৃষ্টি হতে পারে। দেশের প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক উড়োজাহাজ শিল্পে জ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ঘটবে।
“অসমে আমুল ডেইরি প্ল্যান্ট স্থাপনের ঘোষণা: দুধ উৎপাদনে বিপ্লবের সূচনা”
ভারতের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি এখনও আন্তর্জাতিক স্কেলে যাত্রীবিমান নির্মাণে নবীন। এজন্য উৎপাদন ও সার্টিফিকেশন পর্যায়ে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকল্প সফল করতে হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ, যন্ত্রাংশ সরবরাহ-চেইন এবং রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা শক্তিশালী করা জরুরি।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। Sukhoi-30MKI, BrahMos, T-90 ট্যাঙ্কসহ বহু যৌথ প্রকল্প সফল হয়েছে। ফলে সরকারও আত্মবিশ্বাসী। ভারতের লক্ষ্য, আগামী ১০ বছরে অন্তত ২০০টি রিজিওনাল জেটের বাজার দখল করা।
তবে বাণিজ্যিক পরিচালনায় এয়ারলাইনগুলির আস্থা গুরুত্বপূর্ণ। এয়ারলাইন সংস্থাগুলি নিরাপত্তা ও দক্ষতার সঙ্গে-সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি খরচও বিবেচনা করবে।
SJ-100 পূর্বে আন্তর্জাতিক বাজারে সার্ভিস নেটওয়ার্ক ও খুচরো যন্ত্রাংশ সমস্যা মোকাবিলা করেছে। তাই এবার ভারতকে বিশ্বমানের সাপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।
এছাড়া ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিও একটি বড় বিষয়। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে কারণে প্রযুক্তি সরবরাহ, ইঞ্জিন অংশ, এবং গ্লোবাল সার্ভিস এক্সেসে সতর্কতা রাখা প্রয়োজন।
অন্যদিকে, ভারতের বিমান যাত্রী সংখ্যা প্রতি মাসে রেকর্ড সংখ্যা ছুঁতে চলেছে। Tier-2 এবং Tier-3 শহরগুলিতে বিমানবন্দর চালু হচ্ছে। ফলে রিজিওনাল জেট বাজারে প্রকৃত সম্ভাবনা রয়েছে।
এই প্রকল্প সফল হলে ভারতীয় এয়ারলাইনগুলির খরচ কমবে এবং যাত্রী ভাড়া স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।
সামগ্রিকভাবে, HAL-UAC সুপারজেট প্রকল্প ভারতীয় এভিয়েশনের কাছে বড় সুযোগ। তবে সঠিক প্রযুক্তি বাস্তবায়ন, নিরাপত্তা-মান, এবং মেইনটেন্যান্স-ইকোসিস্টেম নিশ্চিত করা ছাড়া সফলতা আসবে না।
দেশ এখন দেখে — ভারত প্রথম বেসামরিক যাত্রীবিমান উৎপাদন করতে পারে কি না।
আরও পড়ুন :
সেলিনা জেটলির ভাই আটক UAE-তে, হাইকোর্ট বলল ‘যোগাযোগ নিশ্চিত করুন’
নিউইয়র্কে ইতিহাস গড়লেন জোহারান মামদানি, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম প্রথম মেয়র