Himachal Flash Floods
সিমলা, ২৫ মে ২০২৫ : হিমাচল প্রদেশে টানা বর্ষণে কুলু ও রামপুরে হড়পা বান, চম্বায় ধস এবং উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে শিলাবৃষ্টির ফলে গোটা রাজ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কুলুর নিরমন্দ এলাকার জগতখানা গ্রামে হঠাৎ হড়পা বানে (Himachal Flash Floods) অন্তত ২০-২৫টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, চম্বা জেলার তিসা সাব-ডিভিশনে ধসের ফলে প্রাণ হারিয়েছেন এক তরুণ। রাজ্যের সাতটি জেলায় ২৮ মে পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির জন্য আবহাওয়া দফতর ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি করেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় নিরমন্দ উপত্যকার জগতখানা অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টির ফলে হঠাৎ হড়পা বান দেখা দেয়। জলের তোড়ে একে একে কয়েক ডজন যানবাহন ভেসে যায় বা পাথরে ধাক্কা খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার পাশের পাহাড়ি স্রোত আচমকা ফুলে ওঠে এবং পার্ক করা গাড়িগুলি একে একে বয়ে নিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা মেঘভাঙা বৃষ্টিকে দায়ী করছেন। তাদের মতে, উপরের পাহাড় থেকে প্রচণ্ড জলের তোড় নেমে আসে, যার জন্য মাত্র কয়েক মিনিটেই গোটা এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। যদিও প্রশাসনের বক্তব্য, এটি হড়পা বান এবং তা অতিবৃষ্টির ফলেই হয়েছে।
তীব্র গরমের আশঙ্কা থাকলেও কালবৈশাখীতে মিলবে স্বস্তি: মে মাসের তাপপ্রবাহ নিয়ে মৌসম ভবনের পূর্বাভাস
চম্বা জেলার তিসা এলাকায় টানা বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসে পড়ে এবং তার নিচে চাপা পড়ে যান এক ২৭ বছর বয়সী যুবক। স্থানীয়দের তৎপরতায় দেহ উদ্ধার হয়, তবে ঘটনাটি গোটা অঞ্চলে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ধসের কারণে বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়েছে, এবং চম্বা-ভদ্রাবাহ-ডালহৌসি রোডে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আবহাওয়া দফতর হিমাচলের ৭টি জেলায় ২৮ মে পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি করেছে। এই জেলাগুলি হল: শিমলা, সোলান, সিরমৌর, মণ্ডী, কুলু, কাংড়া এবং চম্বা।
সতর্কতা অনুযায়ী, পাহাড়ি এলাকা ও ঢালু অঞ্চলে যেকোনো সময় ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। নদী ও খালের তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।
উচ্চ হিমাচলের অনেক এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। কুলু, কিন্নৌর, লাহৌল-স্পীতি ও চম্বা জেলার আপেল বাগানগুলোতে শিলাবৃষ্টির কারণে ফল ঝরে পড়ছে এবং গাছের ডাল ভেঙে যাচ্ছে।
চাষিদের মতে, এবছরের আপেল মৌসুমে ইতিমধ্যেই তুষারপাত ও খরা পরিস্থিতির ধাক্কা লেগেছিল, তার উপর শিলাবৃষ্টি নতুন করে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। মণ্ডী ও কাংড়া জেলার ধান, ভুট্টা ও সবজি চাষেও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃষ্টির কারণে বহু রাজ্য ও জাতীয় সড়কে কাদার স্তর জমেছে এবং কিছু সড়ক ধসে পড়েছে। হিন্দুস্তান-তিব্বত হাইওয়ের কিছু অংশ রামপুরের কাছে বন্ধ হয়ে গেছে। পাহাড়ি অঞ্চলে যাত্রীবাহী ও পর্যটকবাহী যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বিকল্প রুট ব্যবহার করতে বলেছে।
হিমাচল প্রশাসন দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীকে (SDRF) সতর্ক অবস্থানে রেখেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রাথমিক উদ্ধার ও পরিষ্কার অভিযান শুরু হয়েছে। রাজ্যের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সেলের পক্ষ থেকে পর্যটকদের অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন পরবর্তী কয়েকদিন পাহাড়ি অঞ্চলে অপ্রয়োজনীয় সফর এড়িয়ে চলেন।
গ্রীষ্মকালে হিমাচল রাজ্যের বিভিন্ন হিল স্টেশন যেমন কুলু, মানালি, ধরমশালা ও ডালহৌসিতে পর্যটকদের ভিড় থাকে। কিন্তু আবহাওয়া ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে বহু বুকিং বাতিল হচ্ছে এবং হোটেল মালিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। শিমলা শহরের কিছু অংশে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
আরও পড়ুন :
ঝাড়খণ্ডে এনকাউন্টারে নিহত জেজেএমপি প্রধান পাপ্পু লোহার, মাওবাদী আন্দোলনে বড় ধাক্কা