India US trade tariffs
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : এই সপ্তাহে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে ফের বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, তিনি নাকি ভারতের উপর ২৫০ % শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। সেই হুমকির ফলেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তৎকালীন উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেমে যায়। ট্রাম্পের দাবি, এই পদক্ষেপ কার্যকর না হলে দুই দেশের মধ্যে বড়সড় যুদ্ধ শুরু হত।
তবে, ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবি সরাসরি খণ্ডন করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ভারত নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেয়। বিদেশি চাপ বা হুমকিতে নয়। ফলে, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে এই ইস্যু ঘিরে নতুন প্রশ্ন উঠছে।
ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, Operation Sindoor-এর সময় ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক খুব উত্তপ্ত ছিল। সেই সময় তিনি নাকি মোদি সরকার এবং পাকিস্তানকে বার্তা দেন। তিনি বলেন,
“২৫০ % শুল্ক আরোপ করব। তাহলে তোমরা কখনও ব্যবসা করতে পারবে না।”
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, এই কঠোর সতর্কতার পরই ভারত ও পাকিস্তান পিছিয়ে আসে। তবে বাস্তবিক পরিস্থিতি ছিল জটিল এবং বহুমুখী।
“ঘনিষ্ঠ বন্ধু, স্বাভাবিক অংশীদার”: ট্যারিফ বিরোধের মাঝেই মোদি-ট্রাম্পের বাণিজ্য আলোচনায় আশার সুর
চীনের ওপর ট্রাম্পের ১০৪ শতাংশ শুল্ক, বিশ্বজুড়ে এবার কী ঘটবে?
ভারত সরকার বলেছে, দেশের সার্বভৌম নীতি নিয়ে কোনও বিদেশি নেতার বক্তব্য প্রাসঙ্গিক নয়। ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি ভারতের কূটনৈতিক, সামরিক এবং নিরাপত্তা সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। তাই ট্রাম্পের দাবি ভারত মানছে না।
এমনকি ভারতের কূটনৈতিক মহল মনে করে, ট্রাম্পের বক্তব্য মূলত রাজনৈতিক। মার্কিন ভোটারদের সামনে নিজেকে শক্তিশালী নেতা হিসেবে তুলে ধরা তার উদ্দেশ্য।
এদিকে, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনাও সংবেদনশীল অবস্থায় রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ফুল-ফ্লেজড ট্রেড ডিল হয়নি। কারণ, ভারত চাইছে—
অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ না হয়
রপ্তানি-পণ্যের জন্য বিশেষ সুবিধা
প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিশ্চিত
অন্যদিকে আমেরিকার দাবি—
বাজার আরও উন্মুক্ত করে দিতে হবে
কৃষি ও প্রযুক্তি-খাতে ভারত যেন সীমাবদ্ধতা কমায়
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সুরক্ষা আরও শক্ত হয়
এই ব্যবধান কমানোই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক-হুমকি মন্তব্য শুধু বাণিজ্য নয়। এটি ভূ-রাজনীতি ও শক্তি-প্রদর্শনের অংশ।
কারণ—
আমেরিকা চাইছে ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মধ্যে রাখা
একই সঙ্গে চীন-রাশিয়া সংযোগ ঠেকানো
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বজায় রাখা
তাই মন্তব্যটি শুধু ইতিহাস নয়, ভবিষ্যতের সংকেতও বটে।
এখন ভারত বৈদেশিক সম্পর্ক এগিয়ে নিচ্ছে “বহুমুখী অংশীদারিত্ব” মডেলে। অর্থাৎ—
শুধুমাত্র আমেরিকার ওপর নির্ভর না
রাশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও জাপানের সঙ্গে সমানতালে সহযোগিতা
নিজের কৌশলগত স্বার্থ আগে রাখা
সুতরাং ট্রাম্পের মন্তব্যে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক বোঝাপড়া বদলাবে না।
বিনিয়োগ-বিশ্লেষকদের মতে,
মার্কিন শুল্ক চাপ বাড়লে ভারতীয় রপ্তানির ঝুঁকি বাড়বে
তবে ভারতীয় বাজারে উৎপাদন ও আত্মনির্ভরতার সুযোগ বৃদ্ধি
বিদেশি বিনিয়োগেও সতর্ক মনোভাব
এদিকে ভারতীয় আইটি, ইলেকট্রনিক্স ও ওষুধ শিল্প যুক্তরাষ্ট্রে বড় ভূমিকা রাখে। তাই দুই দেশের অর্থনীতি পরস্পর নির্ভরশীল।
ট্রাম্পের দাবি রাজনৈতিক হতে পারে। তবে এই মন্তব্য ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য-কূটনীতির সংবেদনশীল অবস্থাকে সামনে এনে দিয়েছে। ভারত অবিচল — বিদেশি চাপ নয়, জাতীয় স্বার্থই প্রধান। আর মার্কিন নেতৃত্বও বোঝে—ভারতকে পাশে না রাখলে এশিয়া-কৌশল দুর্বল হবে।
সব মিলিয়ে, সামনে আরও কূটনৈতিক টানাপড়েন থাকবে। কিন্তু ভারত তার পথেই অটল — স্বাধীন সিদ্ধান্ত, সার্বভৌম নীতি এবং উন্নয়ন-স্বার্থ আগে।