ভারতীয় টাকার পতন
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ভারতীয় টাকার মান ক্রমাগত নিচের দিকে নামছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার দুর্বল হচ্ছে। সাধারণ অর্থনৈতিক নিয়মে এই পরিস্থিতিতে টাকার শক্তিশালী হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) টাকা ডলারের বিপরীতে ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থায় পৌঁছেছে।
প্রতি ডলার লেনদেন হয়েছে প্রায় ৮৮ টাকা ৭৪ পয়সায়। অর্থনীতিবিদদের মতে, এক দশকের মধ্যে এতটা দুর্বল অবস্থায় টাকা আগে দেখা যায়নি। ডলার দুর্বল হলেও টাকার এই পতনের কারণগুলো মূলত দেশভিত্তিক।
বিদেশি বিনিয়োগ কমছে
প্রথমত, বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এতে শেয়ারবাজার ও বন্ড মার্কেট চাপের মুখে পড়ছে। বিনিয়োগ নির্গমন রুপির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা থাকলেও স্থানীয় কারণগুলো বড় প্রভাব ফেলছে।
মার্কিন নীতির প্রভাব
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করনীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এছাড়া H-1B ভিসার ফি বাড়ানোয় ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতও বিপাকে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কারণে ভারতের ডলার আয়ের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রাশিয়ার তেল কিনছে ভারত-চীন, এবার ৫০০% শুল্কের মুখে? যুক্তরাষ্ট্রে উত্তপ্ত আলোচনা
লোকটাক হ্রদের তীরে জন্ম নেওয়া পদ্মফুল থেকে সিল্ক কাপড়, আলোচনায় মনিপুরের তরুণী
আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে
তৃতীয়ত, ভারত ব্যাপকভাবে তেল ও জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। ডলার দুর্বল হলেও আমদানি বিল বেড়ে যাওয়ায় রুপি আরও চাপে পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সামান্য বাড়লেই ভারতের বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি তৈরি হয়।
রিজার্ভ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (RBI) বাজারে হস্তক্ষেপ করছে। তারা বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করে টাকার পতন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে নন-ডেলিভারেবল ফরওয়ার্ড (NDF) মার্কেটে সক্রিয় রয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত খুব কার্যকর হয়নি। রিজার্ভ খরচ বাড়ায় RBI-র সীমাবদ্ধতাও প্রকাশ পাচ্ছে।
অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলার দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও টাকার এই দুর্বলতা ভারতের অর্থনীতির দুর্বল দিকগুলোকে স্পষ্ট করছে। বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস, বাণিজ্য ঘাটতি, এবং জ্বালানি আমদানির চাপ টাকাকে দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়বে।
কারণ, টাকার মান কমে গেলে আমদানি পণ্যের দাম বাড়ে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে জ্বালানি, গাড়ি, ইলেকট্রনিকস, এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপরও। ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
সরকার ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, মুদ্রা বিনিময় হারের অস্বাভাবিক ওঠানামা রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন :
বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে কলকাতায় কাড়াকাড়ি, দাম চড়া তবুও লুফে নিচ্ছেন ক্রেতারা