Haribhau Bagade
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: ভারতের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত সম্পর্ক হল সম্রাট আকবর ও রাজকুমারী জোধা বাই-এর সম্পর্ক (JodhaAkbarControversy)। অনেক ইতিহাসবিদ থেকে বলিউড, সবার গল্পে এই প্রেম ও বিবাহ একটি প্রতিষ্ঠিত অধ্যায়। তবে এই বহুল প্রচলিত ইতিহাসকেই ‘মিথ্যে’ বলে উড়িয়ে দিলেন রাজস্থানের রাজ্যপাল হরিভাও বাগাড়ে।
সম্প্রতি বুধবার রাজস্থানের উদয়পুরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সে রাজ্যের রাজ্যপাল বাগাড়ে সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “ইতিহাসে লেখা আছে যে আকবর জোধা বাইকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। এই তথ্য ইতিহাসের নামে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এমন অনেক কিছুই আমাদের ইতিহাস বইয়ে আছে যেগুলোর ভিত্তি নেই। আমাদের উচিত আসল ইতিহাস খুঁজে বের করা ও নতুন প্রজন্মকে সঠিক তথ্য দেওয়া।”
রাজ্যপালের এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বহু ঐতিহাসিক, রাজপুত সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিক এই মন্তব্যকে অপমানজনক বলে দাবি করেছেন। অনেকে বলছেন, এটি একটি সাংস্কৃতিক আক্রমণ এবং ইতিহাসকে নতুন করে লেখার চেষ্টা।
কংগ্রেস ও বিভিন্ন বামপন্থী দল অভিযোগ করেছে, রাজ্যপালের মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের দাবি, “ইতিহাসকে মুছে ফেলা কিংবা পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা চলছে সরকার পৃষ্ঠপোষিত ভাবে।”
২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত ‘জোধা আকবর’ সিনেমাটি এই ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করে। হৃতিক রোশন ও ঐশ্বর্য রাই অভিনীত এই চলচ্চিত্র জোধা-অকবর প্রেমকে জনপ্রিয় করে তোলে।
রাজ্যপালের মন্তব্যের পর সিনেমাটির প্রাসঙ্গিকতাও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। অনেকে বলছেন, “ঐতিহাসিক সত্য না হোক, এই গল্প ভারতীয় সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। একে অস্বীকার করা মানেই সংস্কৃতির উপর আঘাত।”
প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদদের মতে, ‘জোধা বাই’ নামটি ছিল একধরনের প্রচলিত উপনাম। আসলে আকবরের হিন্দু স্ত্রী ছিলেন রাজপুত রাজকন্যা হীর কুংওয়ারি বা মরিয়ম-উজ-জামানি। তিনি ছিলেন আম্বার (বর্তমান জয়পুর) রাজবংশের সদস্য। কেউ কেউ বলেন, পরবর্তীতে তিনিই জোধা নামে পরিচিত হন। “জোধা বাই” নামটি জনপ্রিয়তা পায় মূলত ব্রিটিশ ইতিহাসবিদদের লেখনীতে এবং পরে বলিউডের ‘জোধা আকবর’ সিনেমার মাধ্যমে। কিন্তু আসল ‘জোধা’ সম্ভবত ছিলেন আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীরের স্ত্রী, মানাবতী বাই ।
বলিউড অভিনেতা মুকুল দেবের অকাল প্রয়াণ: ৫৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
হরখা বাই বা হীর কুংওয়ারি ছিলেন আম্বার (বর্তমান রাজস্থানের জয়পুর) রাজবংশের রাজকন্যা এবং রাজার (ভারমাল বা ভারমল) কন্যা। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ একমত যে আকবর তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিবাহ করেন ১৫৬২ সালে। বিবাহের পর তাঁর ইসলামি নাম রাখা হয় “মরিয়ম উজ জামানি”, যার মানে “সময়ের মরিয়ম” বা “Virgin Mary of the Age”।
রাজ্যপাল হরিভাও বাগাড়ে দাবী করেন আম্বারের রাজা এক দাসীর সঙ্গে আকবরের বিবাহ দেন, তাঁর মেয়ে হরখা বাই বা হীর কুংওয়ারির সঙ্গে নয়। যদিও এমন কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি, যাতে প্রমাণ হয় যে আকবরকে আম্বারের রাজা এক দাসীর সঙ্গে বিয়ে দেন। ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপার, এবং সাথ্যনারায়ণ রায়-এর মতে, হরখা বাই ছিলেন একজন সম্মানিত রাজকন্যা এবং আকবর তাঁকে যথেষ্ট সম্মানও দিয়েছিলেন, দাসীর সঙ্গে বিবাহ মূলত একটি মৌখিক কিংবদন্তি, বিকৃত ইতিহাস বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জন্ম নেওয়া তত্ত্ব।
তবে এই নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যেও দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। কেউ বলছেন, জোধা নামটি ব্রিটিশ আমলে ভুলভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন :
যশ-নুসরত: প্রেমে কি তবে “আড়ি”? আলাদা থাকছেন দুই তারকা, জল্পনা তুঙ্গে!