LanguagePolitics MarathiVsHindi
ক্লাউড টিভি ডেস্ক | ১২ জুলাই, ২০২৫ : ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধ ও সাংস্কৃতিকভাবে স্বতন্ত্র রাজ্য মহারাষ্ট্রে ফের নতুন করে দানা বাঁধছে ভাষা-পরিচয়কে (LanguagePolitics MarathiVsHindi ) ঘিরে বিতর্ক। কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দি শিক্ষার চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে রাজ্যের মারাঠি সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। চলমান এই বিতর্ক এখন শুধুমাত্র মতপার্থক্যের জায়গায় সীমাবদ্ধ না থেকে সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে, যার নেপথ্যে রয়েছে মোদি সরকারের নেতৃত্বাধীন বিজেপির হিন্দুত্ববাদী নীতির একটি সুপরিচিত ভাষাগত শাখা—‘এক দেশ, এক ভাষা’ চিন্তাধারা।
বিতর্কের সূত্রপাত হয় ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, যখন মহারাষ্ট্র সরকার ঘোষণা দেয়, রাজ্য পরিচালিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ও মারাঠির পাশাপাশি তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি শেখানো বাধ্যতামূলক হবে। রাজ্য সরকারের মতে, এই পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP)-এর অন্তর্ভুক্ত এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নত করার লক্ষ্য রয়েছে।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পরপরই রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। অনেকেই অভিযোগ তোলেন, এটি আসলে মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার একটি ছলমাত্র।
বিভিন্ন মারাঠি ভাষা আন্দোলনকারী সংগঠন, সাহিত্যিক, নাগরিক সমাজ এবং বিরোধী দলগুলো একযোগে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। ‘শুদ্ধি মারাঠা ক্রান্তি মঞ্চ’, ‘মহারাষ্ট্র সংস্কৃতি রক্ষা পরিষদ’ সহ একাধিক সংগঠন স্পষ্ট ভাষায় জানায়, “মহারাষ্ট্রে হিন্দি চাপানো চলবে না। আমরা নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আপস করব না।”
এই আন্দোলন দ্রুতই শহর ও গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। মুম্বই, পুনে, নাসিক, নাগপুরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলে। কিছু জায়গায় হিন্দি বোর্ড টানানো দোকানে ভাঙচুর, ট্রেন বা অফিসে হিন্দি ভাষায় নির্দেশিকা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। এমনকি মারাঠি ভাষায় কথা বলায় ‘অসহিষ্ণু আচরণ’ করার অভিযোগেও কয়েকটি সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে।বিরোধী দল এনসিপি (শরদ গ্রুপ), কংগ্রেস ও শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) সরকারকে একহাত নিয়েছে। তারা বলছে, “এই সিদ্ধান্ত বিজেপির হিন্দিকেন্দ্রিক রাজনীতির অংশ। এতে করে আঞ্চলিক পরিচয়, ভাষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস হচ্ছে।”
এমনকি বিজেপির শরিক দল বলে পরিচিত ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’ (এমএনএস) পর্যন্ত কেন্দ্রের অবস্থানের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। রাজনীতিবিদ রাজ ঠাকরে বলেছেন, “আমরা হিন্দিকে ঘৃণা করি না। কিন্তু আমাদের ভাষার উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া হলে তা বরদাস্ত করব না।”প্রতিবাদে উত্তেজনা এতটাই বেড়েছে যে সম্প্রতি কিছু জায়গায় হিন্দি ভাষাভাষী সম্প্রদায় ও মারাঠিদের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দফতরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
শহরের কোলাহলে সম্পর্কের গান—‘মেট্রো ইন দিনো’ তে বসু-ম্যাজিক!
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারের হাতছানি—বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
এই বিতর্কের মধ্যে পড়ে রাজ্য সরকার হিন্দি শিক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি, বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে।মহারাষ্ট্র সরকারের এক মুখপাত্র জানান, “আমরা কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতির আওতায় থাকলে কিছু বিষয় বাস্তবায়ন করতেই হয়। যেহেতু এতে আপত্তি উঠেছে, তাই আমরা পুনর্বিবেচনা করব।”
ভাষা রাজনীতির এই বহুমাত্রিক দ্বন্দ্ব নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রের হিন্দিকেন্দ্রিক ভাষানীতি বহু রাজ্যে অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, কেরল, কর্নাটক কিংবা পূর্ব ভারতের বাংলা, ওড়িশা থেকেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে।ভারতের মতো বহুভাষিক ও বহুজাতিক দেশে এই ধরনের একতরফা ভাষানীতি বাস্তবায়ন জাতীয় সংহতিকে দুর্বল করতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন অনেকে।
আরও পড়ুন :
তদন্তে নয়া মোড়: এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমানে দুর্ঘটনার নেপথ্যে রহস্যজনক ‘জ্বালানি বন্ধ’