RussianOil Different USTariffs
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারতকে শুল্ক আরোপ করে শাস্তি দেওয়া হলেও চীনের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া (RussianOil Different USTariffs) হয়নি। এই প্রসঙ্গে মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমেরিকার এই অবস্থান একেবারে “ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা”র সঙ্গে যুক্তিযুক্ত।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমী দেশগুলি রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে ভারত ও চীন রাশিয়ার সস্তা তেলের অন্যতম প্রধান ক্রেতা হয়ে উঠেছে। বিশেষত ভারত আমদানিকৃত রাশিয়ান তেল প্রক্রিয়াজাত করে পশ্চিমী দেশগুলিতে রপ্তানিও করছে। এ বিষয়টি মার্কিন প্রশাসনের চোখে পড়ে এবং ভারতীয় পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল—চীনও তো রাশিয়ার অন্যতম বড় ক্রেতা, তবে কেন তাকে একইভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না?
রুবিও জানান, ভারত ও চীনের পরিস্থিতি এক নয়। তাঁর মতে—
ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক “বন্ধুত্বপূর্ণ কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক”, তাই ভারতকে বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে।
অন্যদিকে চীন সরাসরি আমেরিকার কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী, এবং তাকে শুল্ক দিয়ে শাস্তি দেওয়া হলে পরিস্থিতি আরও তীব্র হতে পারে।
রুবিও স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা ভারতকে শুল্ক দিয়ে সতর্ক করছি, কিন্তু চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া মানে একটি পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া। সেটি আমেরিকার পক্ষে এখনই কৌশলগতভাবে সঠিক নয়।”
ভারত বারবার জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি সম্পূর্ণভাবে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর একাধিকবার বলেছেন, ভারত তার নাগরিকদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখবে, এবং পশ্চিমী চাপের কাছে নত হবে না।
তবে মার্কিন ট্যারিফে ভারতের রপ্তানি খাতে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রুবিওর এই বক্তব্য আসলে এক জটিল বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনকে সরাসরি অর্থনৈতিকভাবে শাস্তি না দিয়ে মূলত তাকে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মোকাবিলা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে—
মার্কিন অর্থনীতি এখনো চীনের সাপ্লাই চেইনের ওপর নির্ভরশীল।
তাই তেলের কারণে চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করলে বৈশ্বিক বাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে।
ভারতের ক্ষেত্রে সেই অর্থনৈতিক ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক কূটনীতিক এর আগে বলেছিলেন, ভারত ও চীন উভয়েই রাশিয়ার অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখছে। তবে এখন মার্কিন সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করে দিল, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অর্থনৈতিক স্বার্থ ও কৌশলগত অগ্রাধিকার সব সময় সমানভাবে কার্যকর হয় না।
ভারতের জন্য মার্কিন ট্যারিফ বড় চাপ তৈরি করতে পারে, বিশেষত রপ্তানি নির্ভর খাতে। অন্যদিকে চীনকে ছাড় দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থানকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
ভারত এখন দ্বিধায়—মার্কিন সম্পর্ক বজায় রাখা নাকি রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা আরও জোরদার করা। এ সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ভারসাম্যকে অনেকটাই প্রভাবিত করবে।
আরও পড়ুন :
ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে ওয়াশিংটনে সমাবেশ, ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে বাড়ছে কূটনৈতিক টানাপড়েন
সুপ্রিম কোর্টে বড় স্বস্তি: চাকরির বদলে টাকার মামলায় জামিন পেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়