MedicalVisa Bangladeshi
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মেডিকেল ভিসার মেয়াদ ও সুযোগ আরও বাড়ানোর ঘোষণা করল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রবিবার (১০ আগস্ট) থেকে এই সিদ্ধান্ত (MedicalVisa Bangladeshi) কার্যকর হবে। ভারতের এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে পর্যটন, চিকিৎসা ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশেষ করে বাংলাদেশি রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য চিকিৎসা ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হবে এবং মেয়াদও বৃদ্ধি করা হবে। এর ফলে ভারতের হাসপাতাল ও চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশিদের প্রবেশাধিকার আগের চেয়ে অনেক সহজ হবে। একইসঙ্গে, জরুরি রোগীদের জন্য ‘ফাস্ট-ট্র্যাক ভিসা’ ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যাতে তারা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারির আগে প্রতিবছর পর্যটন, চিকিৎসা ও ব্যবসায়িক কাজে প্রায় ৩৬ লাখ বাংলাদেশি ভারত ভ্রমণ করতেন। এর মধ্যে একটি বড় অংশ কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও ব্যাঙ্গালোরের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন।
তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ভারতের নতুন ভিসানীতির জটিলতার কারণে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে শুধু পর্যটন নয়, চিকিৎসা, হোটেল, পরিবহন ও খুচরা ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে।
কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন,
“বাংলাদেশিদের ওপর নিউমার্কেটের ব্যবসা অনেকটাই নির্ভরশীল। গত এক বছরে বিক্রি অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল। দোকান ভাড়া ও কর্মচারীর বেতন চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছিল।”
পূর্ব ভারতের জনপ্রিয় শপিং হাব নিউমার্কেট, দিল্লির করোল বাগ, চেন্নাইয়ের টি নগর মার্কেট—সব জায়গায় বাংলাদেশি ক্রেতারা প্রধান ক্রেতা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশি রোগীদের ওপর নির্ভরশীল ভারতের নামী হাসপাতালগুলোতেও রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় আয় ব্যাপকভাবে কমে যায়।
চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শ্রীধরন মূর্তি বলেন,
“বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা আমাদের আয়ের বড় একটি অংশ। ভিসা জটিলতার কারণে অনেক সময় জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা বিলম্বিত হয়েছে।”
হোটেল, গেস্টহাউস, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যাক্সি চালক থেকে শুরু করে খুচরা দোকানদার—সবাই এই ভিসা সংকটের কারণে আয় হারিয়েছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন।
ভিসা নীতিতে পরিবর্তনের ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা নতুন করে আশাবাদী হয়েছেন। বিশেষ করে কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, ব্যাঙ্গালোর ও দিল্লির ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাংলাদেশিদের আগমন আবারও বৃদ্ধি পাবে এবং এক বছরের সংকট দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
ভারতের বাণিজ্য বিশ্লেষক অমিতাভ সেন বলেন,
“দুই দেশের মধ্যে নৈকট্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করে। বাংলাদেশি ক্রেতা ও রোগীরা ফিরলে দুই দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম নতুন গতি পাবে।”
ঢাকার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর জানান,
“আমরা প্রতিবছর কলকাতা যাই কেনাকাটা ও পরিবারের চিকিৎসার জন্য। গত এক বছর ভিসা পাওয়া কঠিন হওয়ায় অনেক পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে। এখন সুযোগ সহজ হলে আবার যাওয়া শুরু করবো।”
চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে যাওয়া ফেনীর বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন,
“আমার স্বামীর হার্ট অপারেশনের জন্য বহু মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। আশা করছি, নতুন নিয়মে এই দেরি হবে না।”
ভারতের এই পদক্ষেপকে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। কূটনীতিকরা মনে করছেন, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা ও পর্যটনের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের যোগাযোগ বাড়বে এবং পারস্পরিক আস্থা আরও দৃঢ় হবে।
আরও পড়ুন :
ভারতজুড়ে SIR ইস্যুতে তীব্র আন্দোলনের প্রস্তুতি বিরোধীদের
দ্রুতগতির ২০০ হেলিকপ্টার কিনছে ভারত: শেষ হতে চলেছে চেতক ও চিতা হেলিকপ্টারের যুগ