মোদি সফরের আগে মণিপুর বিজেপি ভাঙন
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মণিপুর সফরের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নড়েচড়ে বসার মতো ঘটনা ঘটল। দীর্ঘ ২৯ মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও অস্থিরতার মধ্যে এবার শাসকদল বিজেপিতে দেখা দিল বড় ভাঙন। রাজ্যের প্রভাবশালী তিন নেতা—ওয়াই সুরচন্দ্র সিং, এল রাধাকিশোর সিং ও উত্তমকুমার নিঙ্গথৌজাম—দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেন।
দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক যোগদান
মঙ্গলবার দিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে যোগ দেন এই তিন নেতা। তাদের মধ্যে দুইজন প্রাক্তন বিধায়ক। কংগ্রেস নেতৃত্বের উপস্থিতিতে তারা জানান, বিজেপি মণিপুরে ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শাসকদল সম্পূর্ণ অক্ষম। তাই তারা মানুষের প্রকৃত স্বার্থে কাজ করার জন্য কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছেন।
নেপালে হিংসার জেরে গোটা দেশজুড়ে কার্ফু, শান্তির আর্জি জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
দুই বছরের সংঘাত, আস্থাহীনতা
গত দুই বছরে মণিপুরের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জাতিগত সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ, ঘরছাড়া হয়েছে লাখো পরিবার। প্রশাসনের উদাসীনতা ও অক্ষমতার অভিযোগে মানুষের ক্ষোভ তীব্র হয়েছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য—“ক্ষমতায় থেকেও যদি সরকার আমাদের রক্ষা করতে না পারে, তবে তাদের সঙ্গে থেকে লাভ কী?”
এই প্রশ্নই এখন বিজেপিকে কোণঠাসা করে তুলছে। অনেকেই মনে করছেন, বিজেপির ভেতর থেকেও নেতারা এই ক্ষোভ অনুভব করছেন। ফলে দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, বিজেপি শুধু রাজনীতি করেছে, কিন্তু রাজ্যের শান্তি ফেরাতে একটুও উদ্যোগ নেয়নি। তাদের ভাষায়—
“মণিপুরের মানুষ রক্ত, আগুন আর অশ্রুর মধ্যে ডুবে আছেন। অথচ বিজেপি শুধু কেন্দ্রের কাছে পরিস্থিতি ঢাকতে ব্যস্ত ছিল। এখন কেবল কংগ্রেসই এই রাজ্যকে বাঁচাতে পারে।”
এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, কংগ্রেস এই ভাঙনকে রাজনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। তারা বিশ্বাস করছে, মণিপুরে নতুন করে আস্থা ফেরাতে কেবল তারাই সক্ষম।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুর সফরে আসছেন দীর্ঘ ২৯ মাস পরে। এই সময়ে রাজ্যজুড়ে সংঘাত, রক্তপাত, ভয় আর আতঙ্কই প্রধান চিত্র। কেন্দ্র সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে বহুবার। এমন অবস্থায় সফরকে ঘিরে বিজেপি বড় শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
কিন্তু নেতাদের এই দলত্যাগ বিজেপির কৌশলে বড় আঘাত হানল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদি এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। সফরে তিনি কী বার্তা দেবেন, কিভাবে ক্ষুব্ধ জনগণের আস্থা ফেরাবেন—এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
শাসকদল যদিও এখনও প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে দলীয় সূত্র বলছে, এই ভাঙনে বিজেপি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তাদের দাবি, জনগণ এখনও মোদির উন্নয়নের রাজনীতিতে আস্থা রাখেন।
কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তব পরিস্থিতি আলাদা। সংঘাতে ক্লান্ত মানুষ এখন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির চেয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা চান। আর সেই জায়গাতেই বিজেপি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
মণিপুরের রাজনৈতিক মাটি এখন উত্তপ্ত। একদিকে মোদির সফর, অন্যদিকে বিজেপির ভেতরে ভাঙন—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। রাজ্যের সাধারণ মানুষ জানতে চাইছে, প্রধানমন্ত্রী এবার কী প্রতিশ্রুতি দেবেন? তার সফর কি সত্যিই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারবে, নাকি এটি শুধুই আরেকটি রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়ে থাকবে?
মোদির সফর যে সহজ হবে না, তা এই দলত্যাগের ঘটনাই স্পষ্ট করে দিল।
আরও পড়ুন :
‘নরেন্দ্র কাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্ট রাজ্যে—২১ দিনব্যাপী প্রতিভা সন্ধান রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড ছুঁয়েছেন রোনাল্ডো, এক ধাপ দূরে একক মালিকানা