MullinControversy USBirthrightDebate
ওয়াশিংটন, ৩০ জুন ২০২৫ : যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেও যদি কারও পিতামাতা অবৈধ অভিবাসী হন, তবে সেই সন্তানদেরও দেশছাড়া করা উচিত (MullinControversy USBirthrightDebate) — এমন মন্তব্য করে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন রিপাবলিকান সিনেটর মার্কওয়েইন মুলিন। তাঁর এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান স্বীকৃত ১৪তম সংশোধনী বা birthright citizenship নীতিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম NBC-এর জনপ্রিয় শো “Meet the Press”–এ ২৯ জুন, শনিবার তিনি বলেন:
“আমরা পরিবার ভাঙতে চাই না। যদি একজন বাবা-মা অবৈধভাবে এখানে থাকে এবং তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়, তাঁর শিশুকেও সাথে যেতে হবে। সে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মেছে কিনা, তা কোনো ব্যাপার নয়।”
এই বক্তব্য সামনে আসার পরপরই আইনি মহল, মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ভারতের ‘কিন্তুর’ উঠে এল কেন? খোমেনির শিকড় খুঁজে পাওয়া গেল উত্তরপ্রদেশে
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুসারে:
“যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এবং এর অধীনস্ত সকলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিক।”
এই নীতিকে বলা হয় “jus soli”, অর্থাৎ ভূমি-নির্ভর নাগরিকত্ব — যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক নাগরিক অধিকারব্যবস্থার ভিত্তি।
সিনেটর মুলিনের মন্তব্যের মূল বক্তব্য ছিল,
শিশুদের পরিবার থেকে আলাদা না করে বরং পুরো পরিবারকেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হোক, যাতে পরিবার না ভাঙে।
এমনকি যদি শিশু যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করে এবং সংবিধান অনুযায়ী নাগরিক হয়ে থাকে, তাহলেও তাকে ‘ডিপোর্ট’ করা যেতে পারে।
এই বক্তব্য প্রথম নয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাঁর প্রশাসন birthright citizenship সীমিত করতে চেয়েছিলেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট তখন তা খারিজ করে দেয়।
বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ লিন্ডা হিলস বলেন:
“সেনেটর মুলিনের মন্তব্য শুধু সাংবিধানিকভাবে ভুল নয়, এটি সরাসরি নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। যদি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব খারিজ করা যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের ভিত্তিই নষ্ট হয়ে যাবে।”
অনেক আইনজীবী মনে করেন, এই ধরনের চিন্তাধারা ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টে নতুন চ্যালেঞ্জের জন্ম দিতে পারে।
ACLU (American Civil Liberties Union) এই বক্তব্যকে ‘নির্বিচার ও অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
অভিবাসী অধিকার সংগঠন RAICES USA বলে:
“আপনি জন্মভূমিতেও যদি নিরাপদ না হন, তবে আর কোথাও আপনি নাগরিক হবেন কীভাবে?”
সোশ্যাল মিডিয়াতেও #BirthrightIsARight, #CitizenshipNotConditional ট্রেন্ড করতে থাকে।
ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া ছিল কড়া। সিনেটর আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্টেজ টুইট করে লেখেন:
“আমরা যেন না ভুলে যাই — এই ধরনের মন্তব্য একসময় ১৯২০-এর বর্ণবাদী অভিবাসন নীতির ছায়া ফিরিয়ে আনছে।”
তবে রিপাবলিকানদের একাংশ, বিশেষ করে দক্ষিণ সীমান্তের স্টেটগুলির প্রতিনিধি, এই ধারণাকে “ব্যবহারিক ও মানবিক” বলে সমর্থন করেছেন।
বাচ্চাদের নাগরিকত্ব আইনি ঝুঁকিতে পড়বে, যদি ভবিষ্যতে সংবিধানের ব্যাখ্যায় পরিবর্তন আসে।
পরিবার বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় আরও বাড়বে — বহু শিশু, যাদের পিতামাতা ডিপোর্ট হয়েছেন, তারা আজও foster care-এ বড় হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের নাগরিকতার স্বীকৃতি কমে গেলে, আন্তর্জাতিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সিনেটর মুলিনের মন্তব্য নিছক একটি রাজনৈতিক মত নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের ধারণা এবং সংবিধানের চেতনার বিরুদ্ধে একটি গভীর আঘাত। যে দেশে জন্ম নিলেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায়, সেই আদর্শ প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বা কংগ্রেস কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু রিপাবলিকান দলের কৌশলে এটি স্পষ্ট — ২০২৬-এর নির্বাচনী ময়দানে birthright citizenship আবার বড় ইস্যু হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন :
‘স্যান্ডাল স্ক্যান্ডাল’: প্রাদার ডিজাইনে ভারতের কলহাপুরি চপ্পল, শুরু বিতর্ক – শেষ স্বীকৃতিতে
দালাই লামার উত্তরসূরী ঘিরে নতুন যুগের সূচনা? ধর্মশালায় উত্তাল রাজনৈতিক-আধ্যাত্মিক আবহ, চিনে উদ্বেগ