Nepal Gen Z Protest Sudan Gurung
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : নেপাল হঠাৎ করে ২৬টি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্লক করে দিলে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। সরকার জানিয়েছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং ভুয়া তথ্য ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে বাস্তবে এই পদক্ষেপ তরুণ প্রজন্মের কাছে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়ে। তাই, তরুণরা সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনে নেমে পড়ে।
প্রথমে “Gen Z” শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় নামলেও পরবর্তীতে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর দমননীতিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। তবে, তারপরও, আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এক তরুণ নেতা—সুদন গুরুঙ।
সুদন গুরুঙ, বয়স ৩৬, “হামি নেপাল” নামে একটি সিভিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বারবার আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তাঁর আহ্বানে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল ইউনিফর্ম পরে বই হাতে মিছিলে অংশ নেয়। এভাবে, তারা বোঝাতে চেয়েছিল যে এই আন্দোলন ধ্বংসাত্মক নয়, বরং শিক্ষিত যুবসমাজের দাবি-দাওয়ার বহিঃপ্রকাশ।
ভয়াবহ গণআন্দোলন, সেনা মোতায়েন – নিহত অন্তত ১৯ : অবশেষে নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান প্রত্যাহার
নেপালে জনরোষে দাবানল: প্রেসিডেন্ট ভবনে আগুন, প্রাচণ্ডের বাড়িতে ভাঙচুর, ওলির ইস্তফা দাবি
গুরুঙের নেতৃত্ব দ্রুতই জাতীয় প্রতীক হয়ে ওঠে। নেপালের সংবাদমাধ্যম তাঁকে “শান্ত প্রতিরোধের মুখ” বলে আখ্যা দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ হলেও তরুণরা VPN ব্যবহার করে তাঁর বক্তব্য ছড়িয়ে দেয়। ফলে, সরকারের চাপে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
গুরুঙ আন্দোলনকারীদের বলেছিলেন, “বই ও কলম আমাদের অস্ত্র, ধ্বংস নয়।” এই বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিবাদের ধরনও বদলে যায়। আগুন, ভাঙচুরের পাশাপাশি অনেকে শান্তিপূর্ণ বসে পড়া মিছিলেও যোগ দেন।
সরকার প্রথমে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখলেও আন্দোলনের তীব্রতা এবং আন্তর্জাতিক চাপে অবশেষে পিছু হটে। অবশেষে, প্রধানমন্ত্রী অফিস থেকে ঘোষণা আসে যে সামাজিক মাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও জানানো হয় যাতে এই ধরনের সংঘাত ভবিষ্যতে এড়ানো যায়।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থেকে সম্ভাব্য আরও সহিংসতা এড়ানোর চেষ্টা করছে। তবু, সাধারণ মানুষ এখনও আতঙ্কে আছে।
আন্তর্জাতিক মহল এই ঘটনার দিকে গভীরভাবে নজর রাখছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি বলেছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করার চেষ্টা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। প্রতিবেশী ভারত ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
নেপালের তরুণ প্রজন্মের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, এটি তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ক্ষেত্র। চাকরির সুযোগ কম, অর্থনীতি দুর্বল, এবং দুর্নীতির অভিযোগ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়া ছিল তাদের আশ্রয়। তাই, হঠাৎ ব্লক করে দেওয়ায় তারা মনে করেছে সরকার তাদের কণ্ঠরোধ করছে।
সুদন গুরুঙ এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন আন্দোলন প্রমাণ করেছে যে নতুন প্রজন্ম কেবল ভোক্তা নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও সংগঠিত। সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এই সত্যই দেখিয়েছে যে তরুণদের শক্তিকে উপেক্ষা করা যায় না। ফলে, নেপালের রাজনীতিতে Gen Z নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন :
নেপালে উত্তাল তরুণ প্রজন্ম: সংসদ চত্বরে পুলিশের গুলি, নিহত অন্তত ১