Nepal social media ban protests
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : নেপালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া প্রতিবাদ দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রথমে যুব সমাজের ছোট পরিসরের প্রতিরোধ আন্দোলন ছিল। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই তা পরিণত হয় দুর্নীতি, স্বৈরাচার এবং প্রশাসনিক অচলতার বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে।
কাটমান্ডুতে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা বাহিনী ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে টিয়ার গ্যাস, জলকামান এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন এবং রাস্তায় অবস্থান নেন। সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ৩০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
নেপালে উত্তাল তরুণ প্রজন্ম: সংসদ চত্বরে পুলিশের গুলি, নিহত অন্তত ১
তুলনামূলক কম উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গের জন্য আরোহন ফি পুরোপুরি মকুব করল নেপাল
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। বিশেষ করে রাজধানী কাটমান্ডু ও পার্লামেন্ট ভবনের আশেপাশে কঠোর কারফিউ ঘোষণা করা হয়। সেনারা টহল শুরু করে এবং বড় ধরনের সমাবেশ বন্ধ করতে নানা পদক্ষেপ নেয়। সরকার আশা করেছিল যে, সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু বাস্তবে আন্দোলনের আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের বিষয় নয়, আন্দোলনকারীরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীনদের পরিবার ও ঘনিষ্ঠ মহল সরকারি সুযোগ-সুবিধা দখল করে রেখেছে। তরুণরা ‘নেপো কিডস’ নামে একটি স্লোগান তুলেছেন, যা অভিজাত পরিবারের প্রভাবশালী সন্তানদের বিশেষ সুবিধা ভোগের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রজন্ম জেড বা Gen-Z এই আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি। তাদের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, বরং গণতান্ত্রিক অধিকার ও মত প্রকাশের প্রধান প্ল্যাটফর্ম। তাই সরকারের হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা তাদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
অবশেষে জনমতের প্রবল চাপে সরকার সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। একই সঙ্গে নৈতিক দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেহাক পদত্যাগ করেন। তবে এত বড় দমন-পীড়ন ও প্রাণহানির পরও আন্দোলন থামেনি। বরং আন্দোলনকারীরা দাবি তুলেছেন প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মহলও নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, সরকারের হঠাৎ সিদ্ধান্ত, সেনা মোতায়েন এবং প্রাণঘাতী দমন কৌশল দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। প্রতিবেশী ভারত ও চীন পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।
স্পষ্ট হয়ে উঠছে, নেপালের তরুণ প্রজন্ম কেবলমাত্র সামাজিক মাধ্যম ফিরে পাওয়ার জন্য নয়, বরং একটি জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের জন্যই আন্দোলনে নেমেছে। তাই সরকার শুধু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। বরং এই আন্দোলন দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আরও পড়ুন :
আর.জি.কর চিকিৎসক অভয়া হত্যা–ধর্ষণ মামলা: সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে পরিবার, কেন্দ্রকেও আক্রমণ