NovakDjokovic Serbia StudentMovement
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : বিশ্ব টেনিসের ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় নোভাক জকোভিচ বর্তমানে দেশীয় রাজনীতির টানাপোড়েনে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। সার্বিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুকিচ এবং তার সরকারের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন তিনি। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, জকোভিচ এখন পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়ার (NovakDjokovic Serbia StudentMovement) কথা ভাবছেন। গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করছেন প্রতিবেশী দেশ গ্রিসকে।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সার্বিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের নীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। তাদের দাবির মধ্যে ছিল স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ও বেকারত্ব নিরসনের পদক্ষেপ। আন্দোলন ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকলেও সরকার বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে দমননীতির পথে হাঁটে। কয়েকটি সহিংস ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী নিহতও হন।
এই সময়েই দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াপ্রতিভা নোভাক জকোভিচ প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন—
“যুব সমাজের উপর আমার ভরসা আছে। তাদের ক্ষমতার উপর আস্থা রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি যুবসমাজ, তাদের সম্মান করা উচিত। সার্বিয়ার উন্নত ভবিষ্যতের জন্য তরুণদের কথা শোনা জরুরি।”
জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর জকোভিচ সেই শিরোপা উৎসর্গ করেন আন্দোলনে নিহত এক ছাত্রকে। এমনকি বেলগ্রেডে অনুষ্ঠিত বাস্কেটবল ডার্বি দেখতে গিয়ে তিনি যে টি-শার্ট পরেছিলেন তাতেও লেখা ছিল—“স্টুডেন্টস অ্যান্ড চ্যাম্পিয়ন্স।” এতে তার অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এসব কর্মকাণ্ডের পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ভুকিচ ও সরকারপন্থি গণমাধ্যম তাকে একরকম টার্গেট বানায়। টেনিসে দেশের জন্য অবদান রেখেও জকোভিচকে ‘দেশবিরোধী’ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। কিছু মিডিয়া প্রচার করছে, জকোভিচ নাকি কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থেই খেলেন, সার্বিয়ার জন্য কোনো অবদান নেই।
এমন প্রচারের ফলে দেশজুড়ে তার ভাবমূর্তি নিয়ে বিভাজন তৈরি হয়েছে। একদিকে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থী এখনো তাকে সমর্থন করছেন, অন্যদিকে সরকার ও শাসকদল তাকে নীরবে বা প্রকাশ্যে আক্রমণ করছে।
জকোভিচের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, সাম্প্রতিক সময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে নানা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কিছু অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি তাকে হুমকিও দিয়েছে। এসব কারণে তিনি পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। সার্বিয়ার একাধিক গণমাধ্যম এমনকি দাবি করেছে, সরকারও তাকে দেশ ছাড়তে বাধা দেবে না।
দেখেছেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, বিশ্বের প্রবীণতম মানুষের ১১৬তম জন্মদিন পালন
পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে জকোভিচের সাম্প্রতিক এক পদক্ষেপ। তিনি দেখা করেছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসের সঙ্গে। যদিও দুই পক্ষই একে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে, কিন্তু অনেকের মতে এটি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ। জকোভিচ চাইলে পরিবারসহ গ্রিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করতে পারেন।
বিশ্ব টেনিসে বর্তমানে অন্যতম প্রধান মুখ জকোভিচ। ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক এই তারকার দেশত্যাগ শুধুই সার্বিয়ার নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাধারণত খেলোয়াড়রা রাজনৈতিক বিষয় এড়িয়ে চলেন। কিন্তু জকোভিচ প্রকাশ্যে আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে বিরল সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। অনেকে মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপও হতে পারে।
এখনো পর্যন্ত জকোভিচ নিজে প্রকাশ্যে দেশত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তবে তার নীরবতা ও সাম্প্রতিক কার্যকলাপই জনমনে নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে। সার্বিয়ার গণমাধ্যমে প্রতিদিন নতুন নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে—তিনি কি সত্যিই দেশ ছাড়ছেন, নাকি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা চলছে?
যাই হোক, সার্বিয়ার ক্রীড়াঙ্গন ও সাধারণ মানুষের কাছে এটি নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা। বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা নিজের দেশকে ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিলে তা সার্বিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন :
এই ১০ অভ্যাসে নিজের অজান্তেই গরিব হয়ে যাচ্ছেন না তো?
৬০০ কোটির সাফল্যের পর ‘জেলার’ সিক্যুয়ালে যোগ দিলেন মিঠুন চক্রবর্তী