Dr. AshokLahiri ClinicalEstablishmentsBill
কলকাতা, ২০ জুন: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় গৃহীত West Bengal Clinical Establishments (Registration, Regulation and Transparency) (Amendment) Bill, 2025 ঘিরে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। সংশোধনী বিলটি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে আরও আধুনিক ও সুশৃঙ্খল করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করা হলেও, এতে একাধিক ধারা নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছেন বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক ডঃ অশোক কুমার লাহিড়ী (Dr. AshokLahiri ClinicalEstablishmentsBill )। সম্প্রতি বিধানসভার বাইরে সাংবাদিক দের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বিধানসভার কর্মকাণ্ড জনসাধারণের সামনে আনার দাবীও জানান।
ডঃ লাহিড়ী বলেন , আইনটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন যথার্থ ও সময়োপযোগী হলেও, কিছু ধারা প্রশাসনিক কেন্দ্রিকরণকে উৎসাহ দিচ্ছে এবং একই সাথে বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিহীন কিছু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে প্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলতে পারে।
যে সংশোধনগুলি স্বাগত:
তাঁর বক্তব্যে বিধায়ক স্বীকার করেন যে ২০১৭ সালের মূল আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ছিল। কারণ ২০২৩ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধি (IPC) ও আপরাধবিধি (CrPC) বিলুপ্ত হয়ে নতুন আইনি কাঠামো – ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এবং ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা চালু হয়েছে। সে অনুযায়ী ধারাগুলি সংশোধন হওয়া স্বাভাবিক।
তাছাড়া, লাইসেন্স পুনর্নবীকরণে ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুমোদন না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মঞ্জুর বলে গণ্য করার নিয়মকে “লাল ফিতের ফাঁস” কমানোর জন্য কার্যকরী উদ্যোগ ((Dr. AshokLahiri ClinicalEstablishmentsBill)) বলে বর্ণনা করেন তিনি।
যে সংশোধনগুলি নিয়ে প্রশ্ন:
সংশোধনী বিলে সবচেয়ে বিতর্কিত পরিবর্তন হল জেলার Chief Medical Officer (CMOH)-এর উপর থেকে রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সিং-এর দায়িত্ব সরিয়ে স্বাস্থ্যভবনের কলকাতার কোনও Assistant Director-এর হাতে তুলে দেওয়া। বিধায়কের বক্তব্য, এই ধরনের কেন্দ্রিকরণ নীতিগতভাবে বিকেন্দ্রীকরণের বিপরীত এবং “উন্নয়ন বিরোধী”।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কলকাতায় বসে একজন আধিকারিক কীভাবে কুচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর বা ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি জানতে পারবেন?”
তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি নজরদারিতে এতটাই তৎপর হন, তাহলে জেলার সমস্ত লাইসেন্সড ক্লিনিকের তালিকা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ করা হোক। তাতে মানুষের আস্থা বাড়বে।”
পুরনো আইনে স্বাস্থ্য দপ্তরের Special Secretary বা তাঁর ঊর্ধ্বতন কেউ আপিল শুনতেন। নতুন আইনে বলা হয়েছে “সরকার মনোনীত কোনও আধিকারিক” শুনবেন। বিধায়কের মতে, এতে সিনিয়রিটি ও স্বচ্ছতার অভাব ঘটতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “আইনের ভাষায় ‘prescribed’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মানে এটি বিধানসভায় উত্থাপন ও অনুমোদনের বিষয়। সরকারের কাছে অনুরোধ, এ নিয়ে যেন ভবিষ্যতে যথাযথ বিধানসভা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
সংশোধনী আইনের ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সব ক্লিনিককে e-prescription ও ডিজিটাল মেডিকেল রেকর্ড চালু করতে হবে। যদিও বিধায়কের বক্তব্য, “সরকারি হাসপাতাল, এমনকি মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও এই প্রযুক্তি এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। তাহলে বালুরঘাটের কোনও ডাক্তার হরিদাস পাল কীভাবে একদিনেই এই ব্যবস্থা চালু করবেন?”
তিনি জোর দেন যে, সরকারের উচিত আগে নিজের হাসপাতালগুলিতে এই ব্যবস্থা চালু করা এবং তারপর বেসরকারি বা প্রান্তিক ডাক্তারদের ওপর এটি চাপানো। না হলে তা “আইনের প্রহসন হয়ে দাঁড়াবে”।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, যেসব বেসরকারি হাসপাতাল সরকারি জমি বা সুবিধা পেয়েছে, তাদের ২০% বহির্বিভাগ ও ১০% অন্তর্বিভাগের রোগীদের নিঃশুল্ক চিকিৎসা দিতে হবে।
বিধায়কের প্রশ্ন:
“এখনও পর্যন্ত কটি বেসরকারি হাসপাতাল সরকারি জমি পেয়েছে?”
“তারা কি এই শর্ত মেনে চিকিৎসা দিচ্ছে?”
“যদি না দেয়, তাহলে ক’টির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?”
তিনি তুলে ধরেন দিল্লির একটি সুপ্রসিদ্ধ হাসপাতালে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের ঘটনা, যেখানে নিখরচায় চিকিৎসা না দেওয়ায় হাসপাতাল বাজেয়াপ্ত করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।
বিশ্বকাপে ইরানি সমর্থকদের ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ, দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
বঙ্গজয়ে বিজেপির ভরসা সেই হিন্দুত্ব-মমতা বিরোধিতায়, ২৬ এ চিড়ে ভিজবে?
শেষে বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক ডঃ অশোক লাহিড়ী সরকারের কাছে আরও দুটি তথ্য দাবি করেন:
এখন পর্যন্ত কত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ক’টি ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে?
West Bengal Clinical Establishment Regulatory Commission Fund-এ মোট কত টাকা জমা হয়েছে?
এই সংশোধনী বিলকে “স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ” বলে স্বীকার করলেও ডঃ লাহিড়ী সতর্ক করে (Dr. AshokLahiri ClinicalEstablishmentsBill) বলেন, “আইন যতই আধুনিক হোক না কেন, বাস্তবতার সঙ্গে তার সামঞ্জস্য না থাকলে তা শুধুই কাগুজে সাফল্য।”
তিনি বলেন, “শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশনের ট্রেন ধরলেই বোঝা যায়, আমাদের মানুষ এখনো বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ বা চেন্নাই ছুটছেন চিকিৎসার জন্য। মিথ্যা আত্মতুষ্টির বদলে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে নীতি তৈরি করুন।”
এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা বিলের মূল লক্ষ্যকে স্বাগত জানালেও তা বাস্তবায়নের পথে সরকারের বিভিন্ন দিক থেকে সদিচ্ছা, প্রস্তুতি এবং স্বচ্ছতা দেখানোর প্রয়োজনীয়তার কথা স্পষ্ট করে দেয়। এখন দেখার বিষয়, এই গঠনমূলক সমালোচনার ভিত্তিতে সরকার সংশোধনীতে কী প্রতিক্রিয়া দেয় এবং স্বাস্থ্য পরিসেবা কতটা বাস্তবিকভাবে উন্নত হয়।
আরও পড়ুন :
আইএসএলের ভবিষ্যৎ ঘিরে দুঃস্বপ্ন! এফএসডিএল-এআইএফএফ চুক্তি জট, বন্ধ হতে পারে লীগ?
মার্কিন আধিপত্য নিয়ে শি’র কড়া বার্তা: ‘যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্ব চলবে’