coughsyrup pharma owners arrested
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ভারতের ওষুধ শিল্পে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে কাশির সিরাপ সংক্রান্ত মৃত্যুর ঘটনা। এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফার্মা কোম্পানির মালিক ও শীর্ষ কর্তাদের গ্রেফতারে নাটকীয় অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা।গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক রাজ্যে সমন্বিত রেইড চালানো হয়, যাতে অভিযুক্তরা পালিয়ে যেতে না পারেন। অভিযান পরিচালনায় ব্যবহার করা হয় ড্রোন, জিও-লোকেশন ট্র্যাকার ও ডিজিটাল নজরদারি সিস্টেম।
অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল অভিযুক্তদের ধরপাকড় ও প্রমাণ নষ্টের সম্ভাবনা রুখে দেওয়া। তদন্তকারীরা প্রথমেই সন্দেহজনক ফার্মা ইউনিটগুলির উৎপাদন কারখানা, গুদামঘর এবং ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার ঘিরে ফেলেন। সূত্রের খবর, অভিযানের সময় কিছু জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ নথি, ক্যামিক্যাল ও নিষিদ্ধ কাঁচামাল উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, এই সব সিরাপ তৈরি হচ্ছিল নিম্নমানের রাসায়নিক দিয়ে, যা মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্ত ফার্মা মালিকরা একাধিক দেশে ভুয়ো লাইসেন্সের মাধ্যমে রপ্তানির কাজ চালাতেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে থাকা নকল কোম্পানির নামে অর্থ পাচারের পথ তৈরি করেছিলেন। আরও আশঙ্কাজনক বিষয়, এই সিরাপগুলির কিছু নমুনা আফ্রিকার ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে শিশু মৃত্যুর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
বিশ্বে ১ কোটি ৩৩ লাখ শিশু শরণার্থী: গৃহযুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গল্প
ED Raid: বালি পাচারের তদন্তে শেখ জহিরুল আলি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়
কেন্দ্রীয় সূত্রের দাবি, অভিযুক্তদের ধরতে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছিল, যাতে রাজ্য পুলিশের বিশেষ শাখা, ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো একসঙ্গে কাজ করে। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত মালিক গা ঢাকা দেন—তখনই ড্রোন ব্যবহার করে তাঁর অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। অবশেষে দিল্লির উপকণ্ঠে এক রিসর্ট থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে তদন্তকারীরা।
এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ওষুধ উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণের নিয়ম আরও কঠোর করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী, ভবিষ্যতে সিরাপ বা তরল ওষুধ তৈরি করতে গেলে প্রতিটি উপাদানের উৎস, মান এবং পরীক্ষার রিপোর্ট অনলাইনে জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে রপ্তানি করা পণ্যগুলির র্যান্ডম স্যাম্পল পরীক্ষা করা হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ভারতের ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির সুনাম রক্ষার জন্য এই ধরনের অবৈধ ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি ও বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ইতিমধ্যে বেশ কিছু ফার্মা ইউনিটের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন করে লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও জটিল করা হচ্ছে।
এই ঘটনা শুধু একটি কোম্পানির অপরাধ নয়, বরং ভারতের ফার্মা সেক্টরে মান নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিক দায়বদ্ধতার সংকটের প্রতিফলন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সরকার ও শিল্প একসঙ্গে কড়াকড়ি না বাড়ায়, তাহলে এমন বিপর্যয় ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে।
কাশির সিরাপে শিশু মৃত্যুর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন গোটা দেশ জুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বহু অভিভাবক সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন — “এই ধরনের ওষুধ কীভাবে বাজারে এল? কারা এর অনুমোদন দিল?” সরকার জানিয়েছে, এই ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন :
ভেজিটেরিয়ান যাত্রীকে “মাংস বাদ দিয়ে খেতে” বলায় মৃত্যু! কাতার এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে মামলা
হেয়ার স্টাইলিস্ট জাভেদ হাবিবের বিরুদ্ধে কোটি-কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ, লুকআউট নোটিস জারি