PrafullaRoyDeath
ক্লাউড টিভি, সাহিত্য ডেস্ক: বাংলা সাহিত্যের আর এক বাতিঘর নিভে গেল। প্রয়াত হলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক প্রফুল্ল রায় (PrafullaRoyDeath)। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে কলকাতার একটি হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন এই সাহিত্যিক। তাঁর প্রয়াণে সাহিত্যজগতে শোকের ছায়া।
১৯৩৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন প্রফুল্ল রায়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে, দেশভাগের পর, ১৯৫০ সালে চলে আসেন ভারতে। পেশাদার জীবনের শুরুতে নানা কাজ করেছেন—মজুর, হকার, কৃষিশ্রমিক, প্রেসকর্মী, সরকারি চাকরিজীবী—তবে সবটাই করেছিলেন লেখালেখির তাগিদে। জীবনের প্রতিটি ধাপ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি গড়েছিলেন তাঁর সাহিত্যভাণ্ডার।
Rappa Ray : বড়োপর্দায় এবারে আসছে “রাপ্পা রায় ও ফুলস্টপ ডট কম”, পরিচালনায় চমক
বাংলার সুরের সাধক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়: জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
প্রফুল্ল রায়ের সাহিত্যকর্ম মূলত বাস্তবধর্মী। উদ্বাস্তু, দারিদ্র্যপীড়িত, সংগ্রামী মানুষের জীবন তাঁর কলমে উঠে এসেছে বিশেষ মমত্ববোধের সঙ্গে। বিশেষ করে বাংলা ভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে আগত শরণার্থীদের জীবন ছিল তাঁর লেখার প্রধান উপজীব্য।
কেয়াপাতার নৌকো’র স্রষ্টা প্রফুল্ল রায়ের বাংলা সাহিত্যে অবদান অনস্বীকার্য।। এরপর একে একে ‘নোনা জল মিঠে মাটি’, ‘শতধারায় বয়ে যায়’, ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘পারাপার’, ‘তৃতীয় পক্ষ’ প্রভৃতি কালজয়ী রচনার মাধ্যমে পাঠকমনে গেঁথে গিয়েছেন তিনি।
তাঁর লেখায় মানুষের কথাই ছিল মুখ্য—সেখানেই তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী ও আধুনিক। সামাজিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল তাঁর উপন্যাস। প্রায় ৪৫টির বেশি টেলিফিল্ম, ধারাবাহিক ও সিনেমা নির্মিত হয়েছে তাঁর গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে।
তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার সহ একাধিক রাজ্য ও সাহিত্য সংস্থার সম্মান। তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে, পাঠকের ভালোবাসাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
একটি সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলেন, “আমি চাই, আমার বই পড়ে সাধারণ মানুষ নিজেকে খুঁজে পাক। আমি কোনও সাহিত্যিক উচ্চারণের জন্য লিখি না, আমি মানুষকে বোঝার জন্য লিখি।” এই বলিষ্ঠ কথাটিই ছিল তাঁর সাহিত্যচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু।
তাঁর মৃত্যুতে সাহিত্য মহল শোকাহত। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রফুল্লদা ছিলেন মাটি-ঘেঁষা লেখক। তাঁর মৃত্যু আমাদের বাংলা সাহিত্যের এক বড় ক্ষতি।” বাংলা একাডেমি, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সহ একাধিক সাহিত্য প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছে।
শুক্রবার বার দুপুরে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তাঁর প্রিয় কিছু বই ও একটি পুরনো কলম তাঁর সঙ্গে রাখার কথা জানিয়েছেন পরিবার।
আরও পড়ুন :
মার্কিন আধিপত্য নিয়ে শি’র কড়া বার্তা: ‘যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্ব চলবে’
WorldWarThreat : ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য: আগামী ২৪ ঘণ্টা ভয়াবহ হতে পারে