প্রসেনজিৎ বোস কংগ্রেস যোগদান
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ভারতের রাজনীতিতে অনেক নেতার উত্থান ও পতন হয়েছে। কেউ ছাত্র আন্দোলন থেকে জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা পেয়েছেন, কেউ আবার মতাদর্শের কারণে দলত্যাগ করেছেন। এই ধারারই আরেকটি উদাহরণ হলেন প্রসেনজিৎ বোস। একসময় তিনি ছিলেন সিপিএমের গবেষণা ইউনিটের মুখ্য অর্থনীতিবিদ। JNU ছাত্ররাজনীতির উজ্জ্বল মুখ হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল। তবে ২০১২ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে আপত্তি জানানোয় তাঁকে বহিষ্কার করে CPIM। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক একাকীত্ব।
তবে এবার নতুন মোড়। দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক মূলধারা থেকে দূরে থাকার পর কংগ্রেসে যোগ দিলেন প্রসেনজিৎ বোস। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
মোদির সফরের আগে বড় ধাক্কা, মণিপুরে বিজেপি থেকে তিন প্রভাবশালী নেতা কংগ্রেসে যোগ
লোকসভায় শূন্য, বিধানসভায় শূন্যের পরে এবারে রাজ্যসভায়ও শূন্য হবে সিপিএম!
প্রসেনজিৎ বোসের রাজনীতির শুরু জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র সংগঠন এসএফআই–এর শীর্ষ কৌশলী হিসেবে তিনি দ্রুত নাম কুড়িয়েছিলেন। তাঁর সংগঠন দক্ষতা এবং নীতিগত অবস্থান তাঁকে জাতীয় স্তরে পরিচিতি দেয়। পরে তিনি সিপিএমের গবেষণা সেলের নেতৃত্বে আসেন। অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে তিনি নীতি বিশ্লেষণ ও কৌশলগত প্রস্তাবনায় পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু মতাদর্শের প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। ২০১২ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সময় সিপিএম কংগ্রেসকে সমর্থন দেয়। প্রসেনজিৎ বোস সরাসরি এর বিরোধিতা করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, এটি বাম রাজনীতির মূল অবস্থানকে দুর্বল করবে। এই অবস্থানেই তিনি বহিষ্কৃত হন।
দল থেকে বাদ পড়ার পর প্রসেনজিৎ বোস বহুদিন মূল রাজনীতির বাইরে ছিলেন। তবে অর্থনীতি, জননীতি ও সামাজিক প্রশ্নে তিনি সক্রিয় থাকেন। গবেষণা, লেখালিখি এবং জনমত তৈরির মাধ্যমে তিনি জনপরিসরে নিজের জায়গা ধরে রাখেন।
এবার তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, আজকের ভারতীয় গণতন্ত্র বিপদের মুখে। ভোটাধিকার, সংবিধান ও মানুষের অধিকার রক্ষাই তাঁর অগ্রাধিকার। কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তিনি সেই লড়াইকে আরও বড় মঞ্চে নিয়ে যেতে চান।
প্রসেনজিৎ বোস জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে তিনি আন্দোলন জোরদার করবেন। তাঁর মতে, রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলই গণতন্ত্রকে সংকটে ফেলেছে। কংগ্রেস বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসতে পারে। তাই তিনি সংগঠন গড়ে তোলার কাজে মন দেবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাঁর নীতি–নির্ভর ভাবমূর্তি কংগ্রেসকে নতুন মাত্রা দেবে। ছাত্র ও তরুণদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কংগ্রেসের জন্য বাড়তি সুবিধা আনতে পারে।
প্রসেনজিৎ বোসের কংগ্রেসে যোগদানকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। সিপিএম থেকে বেরিয়ে যাওয়া একজন কৌশলবিদ যখন কংগ্রেসে নতুন অধ্যায় শুরু করেন, তখন তা শুধু ব্যক্তিগত নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন তিনি, সেটি সময়ই বলে দেবে। কিন্তু আপাতত তাঁর এই সিদ্ধান্তে কংগ্রেসে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন :
পহেলগাম হামলায় নিহত পর্যটকের বাবার দাবি, ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ বন্ধ হোক