Russia AIDSvaccine
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ভাইরাসজনিত প্রাণঘাতী রোগ এইডসের (Russia AIDSvaccine) বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম কার্যকর টিকা তৈরির পথে এগোচ্ছে রাশিয়া। যদি এই উদ্যোগ সফল হয়, তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি হবে এক বিরাট মাইলফলক, কারণ এতদিন ধরে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া এই মহামারির প্রতিষেধক আবিষ্কার সম্ভব হয়নি।
রুশ সংবাদমাধ্যম রিয়া নভোস্তি এবং রাশিয়া টুডে জানায়, রাশিয়ার চিকিৎসা ও অনুজীববিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা গামালিয়া ন্যাশনাল সেন্টার ইতোমধ্যে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন স্পুটনিক-ভি তৈরি করেছিল, যা মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় এসেছিল। এবার তারা আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এইডসের প্রতিষেধক বানানোর কাজে নেমেছে।
রাশিয়ার তেল কিনছে ভারত-চীন, এবার ৫০০% শুল্কের মুখে? যুক্তরাষ্ট্রে উত্তপ্ত আলোচনা
গামালিয়া সেন্টারের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ভ্লাদিমির গুশচিন জানিয়েছেন, টিকাটি তৈরি করা হবে সর্বাধুনিক এমআরএনএ (mRNA) প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তিনি বলেন, “আমরা এমন একধরনের অ্যান্টিজেন তৈরি করছি, যা মানবদেহে প্রবেশ করলে বিস্তৃতভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে। ইতোমধ্যে আমরা এর প্রাথমিক গবেষণা শুরু করেছি এবং সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে আগামী দুই বছরের মধ্যেই এইডস প্রতিরোধে কার্যকর টিকা বাজারে আনা সম্ভব হবে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ এইচআইভি (HIV) ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিবছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন আরও কয়েক লাখ মানুষ। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপির (ART) কারণে রোগীরা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলেও এখনো পর্যন্ত প্রতিষেধক না থাকায় এটি সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে রাশিয়ার এই উদ্যোগকে মানবজাতির জন্য যুগান্তকারী সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যদিও এমআরএনএ প্রযুক্তি ভ্যাকসিন গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে, তবুও এইডসের মতো জটিল রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা তৈরি করা সহজ কাজ নয়। এইচআইভি ভাইরাসের প্রবল মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তনের ক্ষমতা গবেষণাকে আরও কঠিন করে তুলছে।
তবুও আশার আলো দেখছেন গবেষকরা। কারণ এমআরএনএ প্রযুক্তি খুব দ্রুত অভিযোজিত হতে পারে এবং বিভিন্ন রকম অ্যান্টিজেন তৈরি করতে সক্ষম। করোনাভাইরাস মহামারির সময় যেমন ফাইজার ও মডার্নার মতো প্রতিষ্ঠানের তৈরি ভ্যাকসিন সফলতা পেয়েছিল, তেমনি এইডস ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ফল আসতে পারে।
বিশ্বজুড়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানালেও তারা বলেছেন, বাস্তবে এই টিকা কার্যকর প্রমাণিত হওয়ার আগে একাধিক ধাপে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করতে হবে। পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি রাশিয়ার তৈরি এই ভ্যাকসিন কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে এটি শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রেও রাশিয়ার একটি বড় সাফল্য হবে। কারণ বর্তমানে রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে, আর এমন সময়ে এই ধরনের বৈজ্ঞানিক সাফল্য তাদের বৈশ্বিক প্রভাব পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন :
মার্কিন চাপের মুখে এক হচ্ছে তিন পরমানু শক্তিধর দেশ : শি-পুতিন-মোদির ঐক্য