Russia Lost "Oil Client" India
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভারতকে কেন্দ্র করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তাঁর দাবি, রাশিয়া তাঁর অন্যতম বড় তেল গ্রাহক ভারতকে হারিয়েছে। অর্থাৎ ভারত আর রাশিয়ার কাছ থেকে আগের মতো তেল কিনছে না (Russia Lost “Oil Client” India)। একই সঙ্গে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও এক ধাপ কঠোর পদক্ষেপ—যাকে তিনি “সেকেন্ডারি ট্যারিফ” বলেছেন—নিতেও পিছপা হবেন না। তাঁর ভাষায়, “এটা রাশিয়ার জন্য ভীষণ বিধ্বংসী হবে।”
এই মন্তব্যের পটভূমি আরও বড়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর ধারাবাহিকভাবে শুল্ক বাড়াচ্ছে। প্রথমে ২৫ শতাংশ “রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ” বসানো হয় ভারতীয় পণ্যের ওপর। তার পরেই বিশেষভাবে রুশ তেল আমদানিকে নিশানা করে আরও ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক চাপানো হয়। অর্থাৎ কার্যত ভারতীয় আমদানির ওপর মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।
আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন,
“ভারত রাশিয়া থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ তেল কিনছিল। এখন তারা আর করছে না। তাই রাশিয়া বড়সড় এক গ্রাহককে হারিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনে তিনি সেকেন্ডারি ট্যারিফ চাপাবেন। তবে প্রয়োজনে না-ও করতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বক্তব্য কেবলমাত্র রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়েছে, এই শুল্ক “অন্যায়, অযৌক্তিক এবং একতরফা”। সরকার বলেছে, ভারতের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেওয়া হবে। শিল্প মহলেও ক্ষোভ বাড়ছে। শীর্ষ শিল্পপতি হর্ষ গোয়েঙ্কা স্পষ্ট জানিয়েছেন, “ভারত কারও কাছে মাথা নত করে না।”
খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাচস ট্রাম্পকে বলেছেন “অর্থনৈতিক নিরক্ষর”। তাঁর মতে, এই নীতি শুধু ভারতকে নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক ধাপ এগিয়ে এই পদক্ষেপকে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে বড় পররাষ্ট্রনীতি ভুল বলে অভিহিত করেছে।
তবে মজার বিষয়, এত শোরগোলের পরও আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের বাজার প্রায় অচলিত থেকেছে। বরং ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কিছুটা কমেই দুই মাসের সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাজার বিশ্বাস করছে না যে ভারতের আমদানির ওপর ট্রাম্পের চাপ বিশ্ব তেল সরবরাহকে বড়ভাবে নাড়া দিতে পারবে। অনেকেই এটিকে আসন্ন পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের আগে এক ধরনের রাজনৈতিক দম্ভ হিসেবে দেখছেন।
রাশিয়ার তেল কিনছে ভারত-চীন, এবার ৫০০% শুল্কের মুখে? যুক্তরাষ্ট্রে উত্তপ্ত আলোচনা
আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনা কি তবে দুর্ঘটনাক্রমে রাশিয়ার ক্ষেপনাস্ত্রে
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সহযোগিতা গত এক দশকে শক্ত ভিত্তি পেয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই শুল্ক দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত সেই সম্পর্ককে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি চাপ আরও বাড়ে তবে ভারত হয়তো রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার দিকেই বেশি মনোযোগ দেবে।
ফিনান্সিয়াল টাইমস সতর্ক করে লিখেছে, এই নীতি ভারতকে BRICS জোট ও আঞ্চলিক অক্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে। অর্থাৎ ট্রাম্প যে আমেরিকার প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, তার উল্টোটাই ফলতে পারে।
সবশেষে নজর এখন আলাস্কায় অনুষ্ঠিতব্য ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকে। দুই নেতা “ইউক্রেন যুদ্ধ” থেকে শুরু করে জ্বালানি সরবরাহ পর্যন্ত নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু বৈঠক হলেই সমাধান আসবে না। তবে ট্রাম্প যে নিজের দিক থেকে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন, তা তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যে স্পষ্ট।
আরও পড়ুন :
শিল্পা শেঠি ও রাজ কুন্দ্রা ৬০ কোটির প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত