SaveNimishaPriya
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচাতে ‘দিয়াহ’ বা রক্তমূল্য হিসেবে ১০ লাখ ডলার দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে (SaveNimishaPriya) বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ইয়েমেনের বিচার ব্যবস্থায় দণ্ডপ্রাপ্তকে ক্ষমার সুযোগ রেখে রক্তমূল্য প্রদানের একটি পথ রাখা হয়, যেখানে ভুক্তভোগীর পরিবার যদি অর্থের বিনিময়ে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে, তবে দণ্ড কার্যকর নাও হতে পারে। এই ব্যবস্থার আলোকে কেরালার এই নার্সকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তার পরিবার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীরা।
নিমিশা প্রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইয়েমেনে তার এক প্রাক্তন সহকর্মী মাহদি আলি আল-মুথানার হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। যদিও তার পরিবার ও সমর্থকদের দাবি, এটি ছিল আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা এবং ঘটনাটি পুরোপুরি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ২০২২ সালে ইয়েমেনি আদালত নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে এবং ২০২৫ সালের জুলাই মাসে সেই রায় কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবশেষ জানা গেছে, ১৬ জুলাই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
কেরালার দরিদ্র গৃহকর্মী প্রিয়ার মা ২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনে রয়েছেন, মেয়ের পাশে থাকার জন্য। মায়ের এই আত্মত্যাগও যেন পরিপূর্ণ না হয়ে যায় – তাই এবার প্রিয়ার মুক্তির শেষ সম্ভাবনা হিসেবে ‘রক্তমূল্য’ প্রদানের পথে হাঁটছেন সকলে। ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ইতিমধ্যেই অনলাইন ক্রাউডফান্ডিং চালু করেছে, যাতে ১০ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা যায়।
ধর্মান্তর র্যাকেটের চক্রে কোটি টাকার সাম্রাজ্য! ‘চাঙুর বাবা’ কে, কীভাবে গড়লেন এই নেটওয়ার্ক?
সংগঠনের অন্যতম সদস্য স্যামুয়েল জেরোম বর্তমানে ইয়েমেনেই আছেন এবং তিনি মাহদির পরিবারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার দায়িত্বে রয়েছেন। জেরোম জানান, পরিবারটিকে ১০ লাখ ডলারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যদি পরিবারটি ক্ষমা করে, তবে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত বা বাতিল হতে পারে।
সমাজকর্মী বাবু জন বিবিসিকে জানান, “প্রসিকিউশন বিভাগ ইতিমধ্যে ফাঁসির তারিখ জানিয়ে দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষকে। তবুও আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে মাহদির পরিবারের রাজি হওয়াটাই এখন একমাত্র পথ।”
তবে এখানেই শেষ নয়। সেভ নিমিশা প্রিয়া কাউন্সিলের এক সদস্যের মতে, পরিবারটি এখনো সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি বা অন্য কোনো দাবি উপস্থাপন করেনি। কাউন্সিল এখনো তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। দেরি হলে হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পথও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ভারত সরকারের তরফ থেকেও কূটনৈতিক পর্যায়ে কিছু আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেলেও, মূল দায়ভার এখন সমাজকর্মী ও লবি গ্রুপগুলোর কাঁধে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ ভারতের বহু মানুষ এই উদ্যোগে অর্থ সহায়তা পাঠাচ্ছেন।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন তুলেছে। নারীবাদী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলছে, একজন নার্সকে এভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া, বিশেষত যদি সেটি আত্মরক্ষার ঘটনা হয়, তা কতটা ন্যায্য। কেউ কেউ আবার এই মৃত্যুদণ্ডকে বৈষম্যমূলক এবং ধর্মীয় আইনের কঠোর প্রয়োগ হিসেবে দেখছেন।
সময় খুবই কম। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই নির্ধারিত হবে প্রিয়ার ভাগ্য। বাঁচানো যাবে কিনা – তা এখন নির্ভর করছে মাহদির পরিবারের সিদ্ধান্ত ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর।
আরও পড়ুন :
ধর্মান্তর র্যাকেটের চক্রে কোটি টাকার সাম্রাজ্য! ‘চাঙুর বাবা’ কে, কীভাবে গড়লেন এই নেটওয়ার্ক?
ডুরান্ড কাপ ঘিরে ইস্টবেঙ্গলের কোমর বেঁধে নামা: ১২ জুলাই থেকে শুরু প্রস্তুতি, টার্গেট ২৩ জুলাই