ShubhanshuShukla
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ভারতের গর্বের নাম শুভাংশু শুক্লা। দীর্ঘ ১৮ দিন মহাকাশে কাটিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (ISS) থেকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরেছেন তিনি। ভারতের পক্ষে এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শুভাংশু (ShubhanshuShukla) হলেন দেশের দ্বিতীয় নাগরিক যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রেখেছেন এবং সফলভাবে মিশন শেষ করেছেন।
তিনি ছিলেন Axiom Mission 4 (Axiom-4)-এর অংশ, যা একটি বেসরকারিভাবে পরিচালিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ মিশন। এই মিশনে শুভাংশু ছাড়াও ছিলেন নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী পেগি হুইটসন, পোল্যান্ডের বিজ্ঞানী স্লাভোস উজনানস্কি, এবং হাঙ্গেরির তিবর কাপো।
২০২৫ সালের ২৫ জুন, ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে SpaceX-এর ফ্যালকন ৯ রকেট ব্যবহার করে Axiom-4 মিশন শুরু হয়। রকেটে চড়ে তাঁরা পৌঁছান আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। মিশনের উদ্দেশ্য ছিল গবেষণা, প্রযুক্তি পরীক্ষা এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া।
শুভাংশু শুক্লা ছিলেন মিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি মহাকাশে থাকাকালীন বিভিন্ন জৈব ও পদার্থবিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা করেন, যার মধ্যে ছিল মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে মানব দেহের প্রতিক্রিয়া, কৃষিভিত্তিক গবেষণা, ও নতুন ওষুধ পরীক্ষার সম্ভাবনা। এ ছাড়াও ভারতের গগনযান মিশনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত সংগ্রহ করেন তিনি।
Watch Dragon and Ax-4 return to Earth https://t.co/n97iYzRQv5
— SpaceX (@SpaceX) July 15, 2025
মহাকাশে ১৮ দিনের যাত্রা
এই ১৮ দিনের মিশনে শুভাংশু প্রতিদিন প্রায় ১০ ঘণ্টা করে কাজ করেছেন। আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন ISS-এর বিভিন্ন মডিউলে। তাঁরা মাইক্রোgravity-তে শস্য উৎপাদন, টার্ডিগ্রেড তথা জলভুক প্রাণীর টিকে থাকার গবেষণা এবং স্পেস হেলথ বিষয়ক নানা পরীক্ষা চালিয়েছেন।
এছাড়া মহাকাশে মানব আচরণ, মনস্তত্ত্ব ও দৈনন্দিন কাজের প্রতিক্রিয়া নিয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই গবেষণাগুলির ফলাফল ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী মঙ্গল বা চাঁদের মিশনের ভিত্তি গড়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীতে ফেরার যাত্রা
১৪ জুলাই (ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত), ড্রাগন ক্যাপসুল ‘গ্রেস’-এর মাধ্যমে শুভাংশুরা ISS থেকে বিচ্ছিন্ন হন। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার যাত্রা শেষে ১৫ জুলাই দুপুরে, প্রশান্ত মহাসাগরের উপর নিরাপদে ‘সপ্ল্যাশডাউন’ করেন তাঁরা। অবতরণ হয় সান দিয়েগো উপকূলে, যেখানে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘শ্যানন’-এ তাঁরা তোলা হয়।
NASA এবং Axiom Space-এর বিশেষজ্ঞরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুনর্বাসন ও পৃথিবীর পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ৭ দিনের পর্যবেক্ষণ শুরু হয়।
নাসার ঘোষণা: ১৪ জুলাই পৃথিবীতে ফিরছেন ভারতীয় মহাকাশচারী শোভনশু শুক্লা ও Axiom-4 মিশনের সদস্যরা
৪১ বছর পর মহাকাশে নভোচারী পাঠাল ভারত, শুভাংশুর সফল অবতরণ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে
ভারতের জন্য তাৎপর্য
শুভাংশুর এই সাফল্য ভারতের জন্য এক বিশাল সম্মানের বিষয়। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO ইতিমধ্যেই তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে গগনযান মিশন ২০২৭–এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিচ্ছে। গগনযান হবে ভারতের প্রথম স্বদেশী মানব মহাকাশ অভিযান, যেখানে মহাকাশে পাঠানো হবে একাধিক ভারতীয় নভোচারী।
তাঁর অভিজ্ঞতা এবং মহাকাশে গবেষণার ফলাফল ভারতের মহাকাশ অভিযানে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পারিবারিক প্রতিক্রিয়া
শুভাংশুর পরিবার উত্তরপ্রদেশের লখনউর কাছে বাস করেন। বাবা-মা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলে ছোটবেলা থেকেই মহাকাশের প্রতি দুর্বল ছিল। তাঁরা মহাকাশে যাওয়ার দিন থেকে প্রতিদিন পুজো-অর্চনা করেছেন। আজকের দিন তাঁদের কাছে স্বপ্ন পূরণের দিন।
Axiom-4 মিশনে শুভাংশু শুক্লার অংশগ্রহণ ও সফল প্রত্যাবর্তন শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য নয়, এটি ভারতের ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের ভিত্তিপ্রস্তর। তাঁর অর্জন ভারতের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে বলেই আশা করা যায়।
আরও পড়ুন :
টেসলা অবশেষে ভারতে: মডেল Y–র দাম ₹60‑68 লাখ, চালু হলো মুম্বই শোরুম