ChinaParade PutinKimXi
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বৃহত্তম সামরিক কুচকাওয়াজ। এই কুচকাওয়াজকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে যে কূটনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কারণ, এ আয়োজনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর পাশে উপস্থিত থাকবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন—যা স্পষ্টভাবে ইউরোপ এবং আমেরিকার প্রতি এক দৃঢ় বার্তা (ChinaParade PutinKimXi) হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একটি সামরিক শোভাযাত্রা নয়; বরং এটি চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া জোটের এক শক্তিশালী প্রদর্শনী। যেখানে একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের জোট আরও সুসংহত হচ্ছে, অন্যদিকে বেইজিং-এ এই কুচকাওয়াজ যেন তার জবাব। তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি কেবল চীনের জাতীয় গৌরবের প্রতীক নয়, বরং ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক মেরুকরণেরও প্রতিচ্ছবি।
এই আয়োজনে মোট ২৬ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান যোগ দেবেন। তবে পশ্চিমী বিশ্বের কেউ উপস্থিত থাকছেন না। কেবলমাত্র স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো ইউরোপের প্রতিনিধি হিসেবে শোভাযাত্রায় থাকবেন। পাশাপাশি ইরান, বেলারুশ, ইন্দোনেশিয়া, সার্বিয়া প্রভৃতি দেশের নেতারা যোগ দেবেন। জাতিসংঘ থেকেও উপস্থিত থাকবেন আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল লি জুনহুয়া। এভাবে বোঝা যাচ্ছে, চীন পরিকল্পিতভাবে পশ্চিমাদের পাশ কাটিয়ে গ্লোবাল সাউথ এবং বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে ইচ্ছুক দেশগুলিকে সামনে টেনে আনছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করছে। ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে রাশিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং কঠোর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। তবুও, বেইজিংয়ের এই মঞ্চে পুতিনের উপস্থিতি রাশিয়া-চীন কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের দৃঢ়তাকেই নতুনভাবে সামনে নিয়ে আসবে।
অন্যদিকে, কিম জং উনের জন্যও এই সফর একটি কৌশলগত বিজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা উত্তর কোরিয়ার নেতা বিশ্বমঞ্চে এত গুরুত্বপূর্ণভাবে খুব কমই দেখা দেন। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম তিনি চীন সফরে যাচ্ছেন। এই সফরের মাধ্যমে কিম স্পষ্টভাবে জানাতে চাইছেন যে, তিনি আর একা নন; বরং চীন ও রাশিয়ার মতো শক্তিধর মিত্র তার পেছনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
চীন এই কুচকাওয়াজে প্রদর্শন করবে তাদের আধুনিকতম সামরিক প্রযুক্তি, যার মধ্যে থাকবে হাইপারসনিক অস্ত্র, মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান। এই প্রদর্শনী শুধু প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দেখানো নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের শক্ত অবস্থান জানান দেওয়ারও এক কৌশল। সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে চীন স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানটিকে কেন্দ্র করে বাকি বিশ্বের উদ্বেগ বাড়ছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এ ধরনের প্রদর্শনী ভবিষ্যৎ বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন “অক্ষশক্তি” গঠনের ইঙ্গিত বহন করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেলেও বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তাদের একত্রিত করছে।
সবশেষে বলা যায়, এই কুচকাওয়াজ কেবল ঐতিহাসিক বিজয় দিবস উদযাপনের একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি এক ভূরাজনৈতিক বার্তা, যা আমেরিকা এবং বন্ধুদের উদ্দেশে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার যৌথ প্রতিরোধের প্রতীক। আগামী দিনে এই প্রদর্শনী আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্যে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখনও সময়ই বলবে। তবে নিশ্চিতভাবেই এটি বিশ্ব কূটনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আরও পড়ুন :
আবারও গাজার দরজায় ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক, ট্রাম্পের নেতৃত্বে হোয়াইট হাউসে বৈঠক
চ্যাটজিপিটি-র বিরুদ্ধে মামলা : কিশোরের আত্মহত্যায় দায়ী কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?