SriLanka RanilWickremesinghe Arrest
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় ফের বড় রাজনৈতিক ভূমিকম্প। দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে-কে গ্রেফতার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাজধানী কলম্বোতে তাকে আটক করা হয়। অভিযোগ— রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যবহার ও অনিয়ম।
স্থানীয় জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম আদা দেরানা জানিয়েছে, ৭৬ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহে ব্যক্তিগত সফরে লন্ডনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তার স্ত্রী মৈত্রীর স্নাতক সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার জন্যই এই সফর। তবে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে তিনি কলম্বোর সিআইডি কার্যালয়ে তদন্তে জবানবন্দি দিতে যান। সেখানেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার রাজনীতির পরিচিত মুখ। আইন পেশা থেকে উঠে এসে তিনি দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)-র দীর্ঘদিনের শীর্ষ নেতা। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অভাবনীয়— ছয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, যা শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে এক রেকর্ড।
২০২২ সালে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে যখন দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের পর সংসদের ভোটে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় শ্রীলঙ্কা কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়ে, বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার শূন্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দেয়।
গ্রেফতারের মূল অভিযোগ হলো, বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে রাষ্ট্রীয় তহবিল অপব্যবহার করেছেন। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, বিদেশ সফর ও ব্যক্তিগত খরচ বাবদ সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছিল। সেই অভিযোগেই সিআইডি তার বিরুদ্ধে মামলা করে। তবে এখনো স্পষ্ট হয়নি মোট কত অর্থ তিনি অপব্যবহার করেছেন।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একাধিক অনিয়ম ধরা পড়ে। বিশেষ করে তার প্রেসিডেন্ট আমলে আন্তর্জাতিক ঋণ, উন্নয়ন প্রকল্প ও বিদেশ সফর বাবদ বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের হিসাব মিলছে না।
বিক্রমাসিংহের গ্রেফতারের পর শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তার দল ইউএনপি অভিযোগ করেছে, এটি একটি ‘রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ’। তাদের দাবি, বর্তমান সরকার বিরোধী শিবিরকে দুর্বল করতে চায়, তাই প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করা হলো।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল বলছে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। রাষ্ট্রীয় অর্থ অপব্যবহার করলে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোন বা সাধারণ নাগরিক— বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতেই হবে।
আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কাকে সংকট থেকে উদ্ধার করতে না পারলেও তার কূটনৈতিক দক্ষতার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত ছিলেন। তাকে গ্রেফতারের ঘটনাকে তারা একটি বড় ‘রাজনৈতিক সংকেত’ হিসেবে দেখছেন।
কোথায় আছেন আয়াতুল্লাহ খামেনি? যুদ্ধের পর জনসমক্ষে অনুপস্থিত, জল্পনা তুঙ্গে
জাতিসংঘ এবং কয়েকটি পশ্চিমা রাষ্ট্র ইতিমধ্যেই নজর রাখছে ঘটনাটির উপর। তারা বলছে, শ্রীলঙ্কায় ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি।
রাজপথে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকের মতে, দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য বিক্রমাসিংহেই মূলত দায়ী। আবার কেউ কেউ বলছেন, অন্তত তিনি সংকট মোকাবিলায় চেষ্টা করেছিলেন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
বিক্রমাসিংহেকে কতদিন রিমান্ডে রাখা হবে বা তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র কখন আদালতে দাখিল হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই গ্রেফতার শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করবে এবং আগামী নির্বাচনের সমীকরণেও প্রভাব ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন :
ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বিপাকে জকোভিচ; ছাড়তে চান দেশ