Breaking News

ইউক্রেন ভূগর্ভস্থ স্কুল ২০২৫

ইউক্রেনিয়ান শিশুরা স্কুলের বর্ষ শুরু করলো ভূগর্ভে: নিরাপদ শিক্ষার একটি সাহসী প্রচেষ্টা

খারকিভে ১৭,০০০ শিশু ভূগর্ভস্থ স্কুলে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করলো। যুদ্ধের ভয়াবহতার মাঝেও শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রাখার সাহসী প্রয়াস।

ইউক্রেনে ভূগর্ভে শিক্ষাবর্ষ শুরু: খারকিভে ১৭,০০০ শিশুর জন্য নিরাপদ স্কুল

ইউক্রেন ভূগর্ভস্থ স্কুল ২০২৫

ক্লাউড টিভি ডেস্ক : রাশিয়ার অব্যাহত হামলা ও যুদ্ধের ভয়াবহ প্রভাবের মধ্যেও ইউক্রেন সরকার এবং অভিভাবকরা শিশুদের শিক্ষাকে থামিয়ে রাখতে চাননি, তাই এবার নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর, ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে প্রায় ১৭,০০০ শিক্ষার্থী প্রথম স্কুল দিবস উদযাপন করেছে, তবে তা কোনো সাধারণ স্কুলে নয়, বরং ভূগর্ভস্থ বিশেষ আশ্রয়কেন্দ্রসদৃশ স্কুলে।

শহরটিকে বারবার রাশিয়ার হামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তাই প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে ভূগর্ভে তাদের নিরাপদ শিক্ষার ব্যবস্থা করার। এই ভূগর্ভস্থ স্কুলগুলো প্রায় তিনতলা গভীরে নির্মিত, যাতে বোমা বা মিসাইল হামলার প্রভাব উপরের তুলনায় অনেক কম হয়। তাই যুদ্ধ চললেও শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে, যদিও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।

এই নতুন বাস্তবতায় সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল ছোট ছোট শিশুদের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা। মাত্র ছয় বছরের মারিয়া ইয়ামপোলস্কা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু তার স্কুলের প্রথম দিনটি কাটছে ভূগর্ভে। কারণ যুদ্ধের কারণে তার কিন্ডারগার্টেনের অভিজ্ঞতা হয়নি, ফলে সরাসরি এই অদ্ভুত পরিবেশে তাকে শিক্ষাজীবন শুরু করতে হলো। শিশুরা একে অপরের হাত ধরে অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায়, শিক্ষকরা তাদের উৎসাহ দেন এবং ক্লাসরুমে বসান—যেন পরিস্থিতি যতই অস্বাভাবিক হোক না কেন, শেখার পরিবেশ যেন বজায় থাকে।

বিশ্বের নিরাপদতম শহরের তালিকা প্রকাশ, কলকাতার অবস্থান জেনে চমকে যাবেন!

বিশ্বে ১ কোটি ৩৩ লাখ শিশু শরণার্থী: গৃহযুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গল্প

অভিভাবকদের অনুভূতিও ছিল মিশ্র। অনাস্তাসিয়া পোচেরগিনা নামের এক মা বলেন, “আজ আমার সন্তান প্রথমবার স্কুলে গেল, তবে ভূগর্ভে। খারকিভের সবচেয়ে গভীরে অবস্থিত এই স্কুলে তাকে পাঠাতে আমি কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত বোধ করছি।” যদিও তাদের মনের মধ্যে যুদ্ধের আতঙ্ক প্রতিনিয়ত বিরাজ করছে, তবু সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ হারাতে দিতে চাইছেন না তারা। অনেকেই মনে করেন, এই উদ্যোগ শিশুদের মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ দিতে সহায়তা করবে।

খারকিভের মেয়র ইহর তেরেখোভ জানিয়েছেন, আপাতত সাতটি ভূগর্ভস্থ স্কুল চালু হয়েছে এবং আগামীতে আরও তিনটি স্কুল খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও, শহরের একাধিক মেট্রো স্টেশনকে অস্থায়ী ক্লাসরুমে রূপান্তর করা হয়েছে, যেখানে শত শত শিক্ষার্থী একসাথে পাঠ নিতে পারছে। একটি স্কুলে প্রায় ১,৫০০ শিক্ষার্থীকে একসাথে পড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে, যা যুদ্ধকালীন সময়ে এক অভূতপূর্ব প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত কেবল শিক্ষার অধিকার রক্ষার জন্যই নয়, বরং শিশুদের সামাজিক সংযোগ বজায় রাখার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন ক্লাসে বহু শিশু দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন ছিল, যার ফলে তাদের মধ্যে সামাজিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল। ভূগর্ভস্থ স্কুলগুলোতে সরাসরি শিক্ষালাভের সুযোগ পেয়ে তারা আবারও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এক বিশাল স্বস্তি।

তবে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভূগর্ভস্থ স্কুল পরিচালনা করতে প্রচুর বিদ্যুৎ, বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা এবং জরুরি সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়। যুদ্ধকালীন সময়ে এগুলো বজায় রাখা মোটেই সহজ নয়। তবুও, প্রশাসন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা মিলে এই উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ শিশুদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঢেকে দেওয়া যাবে না।

ইতিহাসে এই ধরনের উদাহরণ বিরল, যেখানে সম্পূর্ণ এক প্রজন্ম ভূগর্ভে থেকে শিক্ষালাভ করছে। আন্তর্জাতিক মহলও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ এটি কেবল যুদ্ধকালীন শিক্ষাব্যবস্থার নতুন ধারা নয়, বরং শিশুদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের সঙ্গেও যুক্ত।

সব মিলিয়ে, খারকিভ এবং ইউক্রেনের অন্য শহরগুলোতে ভূগর্ভস্থ স্কুলগুলো এখন প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠছে। যুদ্ধ যতদিন চলবে ততদিন হয়তো শিশুরা সূর্যের আলো না দেখেই স্কুলে যাবে, তবে জ্ঞান ও সাহসের আলো তাদের পথ আলোকিত করবে। এই দৃশ্য প্রমাণ করে, যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশেও শিক্ষা থেমে থাকে না, বরং নতুন রূপে বেঁচে থাকে।

আরও পড়ুন :

দিল্লিতে বন্যার আশঙ্কা, যমুনার জল বিপদসীমার ওপরে, গুরুগ্রামে স্কুল-অফিস বন্ধ

বনগাঁ লোকাল AC, পুজোর আগে শিয়ালদহ শাখার যাত্রীদের জন্য সুখবর

ad

আরও পড়ুন: