যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিক ভিসা
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি সাংবাদিকদের ভিসার মেয়াদ কমানোর প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্বের ১১৭টিরও বেশি আন্তর্জাতিক মিডিয়া সংস্থা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা অবিলম্বে বাতিল করা হোক। তাদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত কেবল সাংবাদিকদের কাজকেই বাধাগ্রস্ত করবে না, বরং মার্কিন ভাবমূর্তিরও ক্ষতি করবে।
সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যৌথ বিবৃতিতে অংশ নেয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য সংস্থাগুলো। এদের মধ্যে রয়টার্স, বিবিসি, এআরডি, এবিসি, গ্লোব অ্যান্ড মেইল ও আইরিশ টাইমস উল্লেখযোগ্য। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ভিসার মেয়াদ কমানো হলে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত সংবাদ কভারেজের পরিমাণ ও মান সরাসরি হ্রাস পাবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাধারণ সাংবাদিকদের ভিসার মেয়াদ ২৪০ দিনে সীমিত রাখা হবে। অন্যদিকে চীনা মিডিয়ার কর্মীদের জন্য ভিসার মেয়াদ নির্ধারণ করা হবে ৯০ দিন। শিক্ষার্থীদের ভিসা চার বছরের বেশি থাকবে না। বর্তমানে সাংবাদিকরা পাঁচ বছর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি পান।
এমন প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার ক্ষেত্রে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষপাতী হিসেবে পরিচিত, এই সিদ্ধান্ত সেই ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মার্কিন প্রশাসনকে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।
“ঘনিষ্ঠ বন্ধু, স্বাভাবিক অংশীদার”: ট্যারিফ বিরোধের মাঝেই মোদি-ট্রাম্পের বাণিজ্য আলোচনায় আশার সুর
‘ধনকুবেরের চেয়ে শ্রমিক গুরুত্বপূর্ণ’ : যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-সমাবেশ
সংবাদ সংস্থাগুলো মনে করছে, দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা সাংবাদিকদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, দীর্ঘ সময়ে কাজ করলে তারা প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা, বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক এবং বিষয়ভিত্তিক গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এসব উপাদান ছাড়া আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে মার্কিন নীতি, সংস্কৃতি ও নেতৃত্বকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, ভিসার মেয়াদ কমানো হলে সাংবাদিকরা বাধ্য হবেন নিয়মিত দেশ ছাড়তে। এর ফলে তাদের কাজের ধারাবাহিকতা ভেঙে যাবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতার পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
অভিযোগ উঠছে, এই নীতি আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশেষ করে চীনা সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম প্রযোজ্য করার বিষয়টি অনেককে ভাবাচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী অবস্থান সামনে আসছে। আন্তর্জাতিকভাবে গণমাধ্যমকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমিত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক দেশই বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখবে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে।
ভিসার মেয়াদ সীমিত হলে সাংবাদিকদের ক্যারিয়ারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অনেক সাংবাদিকই যুক্তরাষ্ট্রে বছরের পর বছর কাজ করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। তারা স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং নীতি-নির্ধারকদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এই প্রক্রিয়া ভেঙে পড়বে।
এছাড়া, সংবাদ সংস্থাগুলোর অর্থনৈতিক দিক থেকেও সমস্যা দেখা দেবে। নিয়মিত ভিসা নবায়ন ও যাতায়াতের কারণে ব্যয় বাড়বে। এতে ছোট ও মাঝারি আকারের সংবাদমাধ্যমগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়নি, তবে পরিকল্পনার কথা প্রকাশ হতেই সমালোচনা তীব্র হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, এই নীতি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত।
সাংবাদিকদের দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিকভাবে দৃশ্যমান করে তোলে। এই উপস্থিতি সীমিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। তাই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো ট্রাম্প প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছে, প্রস্তাবটি বাতিল করে পুরনো নিয়ম বহাল রাখতে।
ভিসার মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি। যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়, তবে এই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করাই হবে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। অন্যথায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
আরও পড়ুন :
ডিশ টিভি লঞ্চ করল VZY স্মার্ট টিভি, এক ডিভাইসে DTH ও OTT এর অভিজ্ঞতা
মোদির সফরের আগে বড় ধাক্কা, মণিপুরে বিজেপি থেকে তিন প্রভাবশালী নেতা কংগ্রেসে যোগ