WitchHuntInIndia PurneaMurderCase
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : আধুনিক ভারতেও কুসংস্কারের ভয়াবহ ছায়া এখনও মুছে যায়নি। সেই প্রমাণ মিলল বিহারের পূর্ণিয়া জেলায়, যেখানে ‘ডাইনি বিদ্যা চর্চা’র অভিযোগে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই জঘন্য ঘটনার (WitchHuntInIndia PurneaMurderCase) পর আবারও সামনে উঠে এল, কতটা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার।
ঘটনাটি ঘটেছে ৬ জুলাই (রবিবার) রাতে পূর্ণিয়ার তেতগামা গ্রামে, যেখানে প্রধানত ওরাঁও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রামবাসীদের একটি বড় অংশ এই হত্যাকাণ্ডে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
কীভাবে ঘটল এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড?
সদর পূর্ণিয়ার এসডিপিও পঙ্কজ কুমার শর্মা জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে, অভিযুক্তরা প্রথমে পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে মারধর করে হত্যা করে এবং পরে তাদের দেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তবে নিহতদের জীবিত অবস্থায় আগুনে ফেলা হয়েছিল কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে প্রশাসন।
ঘটনার সময় পরিবারটির ১৬ বছর বয়সী একমাত্র কিশোর সদস্য আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল, ফলে সে প্রাণে বেঁচে যায়। তিনিই পরবর্তীতে পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানান এবং চারজন অভিযুক্তের নাম বলেন। পুলিশের তৎপরতায় তিনজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। চতুর্থজনের খোঁজ চলছে।
ডাইনি বিদ্যার অভিযোগ কতটা সত্য?
এই ঘটনার পেছনে কারণ হিসেবে ‘ডাইনি বিদ্যা’ বা কালোজাদু চর্চার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গ্রামবাসীরা। আদিবাসী সমাজে এখনো কিছু জায়গায় মহিলা বা পরিবারকে ডাইনি বলে দাগিয়ে দেওয়া একটি বড় সামাজিক সমস্যা। বহুবার এই অভিযোগে মানুষকে হত্যা, মারধর, সমাজচ্যুত করার নজির রয়েছে।
তবে এই ঘটনার ক্ষেত্রে এখনও ডাইনি চর্চার কোনও প্রমাণ মেলেনি, এবং তদন্তকারীরা মনে করছেন, পুরোটাই কুসংস্কারজাত কল্পনা।
এসডিপিও শর্মা বলেন,
“এফআইআরে চারজনের নাম রয়েছে। আমরা তিনজনকে গ্রেফতার করেছি। তবে আমরা মনে করছি, এই ঘটনায় পুরো গ্রামই জড়িত থাকতে পারে। তদন্ত সেই দিকেই এগোচ্ছে।”
গ্রামবাসীদের আচরণ, কিছু তথ্য গোপন করার চেষ্টা এবং একযোগে চুপ থাকা এই সন্দেহকে আরও দৃঢ় করেছে। ইতিমধ্যে এলাকায় পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে যাতে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে।
আদিবাসী ক্রিকেটার ‘ঝাড়খন্ডের ক্রিস গেইল’ আইপিএলে এবার খেলবেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে
আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও ক্ষোভ
এই ঘটনার (WitchHuntInIndia PurneaMurderCase) পর থেকে তেতগামা গ্রামে চরম আতঙ্কের পরিবেশ। বহু পরিবার ঘর ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গেছে। অন্যদিকে আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিরা এই বর্বর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলিও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। “ডাইনি প্রথা বন্ধে আইন থাকলেও, প্রয়োগের ঘাটতি আজও সমাজকে রক্ষা করতে পারছে না”, বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকর্মীরা।
ভারতে একাধিক রাজ্যে—বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে এখনো ‘ডাইনি’ বা ‘ডাইনি বিদ্যা’ নিয়ে গুজব রটিয়ে মানুষ খুন করার ঘটনা ঘটে। যদিও কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এই প্রথার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করেছে, তবুও সচেতনতার অভাব ও স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বলতা এই কুসংস্কারকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
আরও পড়ুন :
জল ছেড়েছে DVC, দক্ষিণবঙ্গজুড়ে বাড়ছে প্লাবনের আশঙ্কা
প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা ঘুমিয়ে জিতলেন ১৩ লাখ টাকা! জানুন অভিনব ইন্টার্নশিপের গল্প