PovertyInPakistan
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : পাকিস্তানের অর্থনীতির বেহাল দশার চিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। সংস্থাটির সর্বশেষ বৈশ্বিক দারিদ্র্য সূচক অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৪৪.৭ শতাংশ নাগরিক, অর্থাৎ ১০৭.৯৫ মিলিয়ন মানুষ, বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবনযাপন করছেন (PovertyInPakistan) । এই হিসেব করা হয়েছে নতুন আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা — দৈনিক মাথাপিছু ৪.২০ ডলার — অনুযায়ী।
এই নতুন দারিদ্র্য সীমা নির্ধারিত হয়েছে ২০২১ সালের ক্রয়ক্ষমতার সাম্য (Purchasing Power Parity – PPP) ভিত্তিক তথ্যে, যা ইন্টারন্যাশনাল কম্পারিজন প্রোগ্রাম (ICP) সরবরাহ করেছে। এই হালনাগাদ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় এনে করা হয়ে থাকে।
বিচারকদের ঘাটতি,সঙ্কটে সুপ্রিম কোর্ট, পড়ে রয়েছে ৫ কোটি মামলা!
পাক গুপ্তচরচক্র ভারতে! সাত রাজ্য থেকে ১৫ জন গ্রেফতার, কলকাতাতেও হানা এনআইএ-র
বিশ্বব্যাংকের বক্তব্য অনুযায়ী, নতুন দারিদ্র্যসীমা পুরনো মাপকাঠি (যেমন $2.15) এর তুলনায় বেশি। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রকৃত জীবনযাত্রা ও ব্যয়পত্রকে আরও বাস্তবঘনিষ্ঠভাবে প্রতিফলিত করে।
নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৬.৫ শতাংশ পাকিস্তানি চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছেন — যাঁদের দৈনিক আয় $৩ ডলারেরও কম। সংখ্যায় এই জনগোষ্ঠী প্রায় ৩৯.৮ মিলিয়ন। অথচ, পূর্বের $2.15 মানদণ্ডে এই হার ছিল মাত্র ৪.৯ শতাংশ।
এছাড়া আরও উদ্বেগজনক তথ্য — যদি ‘আপার-মিডল ইনকাম’ সীমা হিসেবে $৮.৩০ দৈনিক মাথাপিছু ধরা হয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে, ৮৮.৪ শতাংশ পাকিস্তানির আয় এই সীমারও নিচে।
অর্থাৎ, দেশের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের কাছাকাছি জনগণ এখনও অর্থনৈতিকভাবে এক গভীর সংকটে জীবন কাটাচ্ছেন।
পাকিস্তানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর নাজি বেনহাসিন অবশ্য স্পষ্ট করে বলেছেন,
“এই দারিদ্র্য পরিসংখ্যানের হালনাগাদ কোনও দেশের অর্থনীতির অবনতিকে সরাসরি নির্দেশ করে না। বরং এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের হালনাগাদ এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলক বিশ্লেষণের প্রতিফলন।”
তাঁর মতে, এই নতুন তথ্য নীতিনির্ধারকদের জন্য সহনশীলতা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এই তথ্য সামনে আসার পর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনামূলক চিত্রও বিবেচনা করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের দারিদ্র্যহার প্রায় ১৮% (৪.২০ ডলারের মাপকাঠিতে)। সেখানে পাকিস্তানের হার ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি — অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি।
এছাড়া ভারত ও নেপালের দারিদ্র্য হারও তুলনামূলকভাবে কম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এই সংকট একমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মুদ্রাস্ফীতি, এবং বহুবছরের কাঠামোগত দুর্বলতা। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ব্যাপক সংস্কার, স্থিতিশীল নীতি এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা অত্যাবশ্যক। তা না হলে, পাকিস্তানের দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা।
আরও পড়ুন :
দারিদ্র দূরীকরণে বিশ্বব্যাঙ্কের স্বীকৃতি: ভারতের দশকে বড় সাফল্য
কলকাতার বুকে ‘মাওবাদী’ হুমকি: স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে চাওয়া হল ৫০ লক্ষ টাকা