BalurghatAirport
বালুরঘাট, ২৩ মে ২০২৫ (ক্লাউড টিভি): বালুরঘাটবাসীর বহুদিনের স্বপ্ন—একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর (BalurghatAirport)। পরিকাঠামো তৈরি, রানওয়ে প্রস্তুত, প্রশাসনিক ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। তবুও নেই কোনো ফ্লাইটের শব্দ, নেই যাত্রীদের আনাগোনা। কারণ একটাই—কেন্দ্রীয় সিভিল অ্যাভিয়েশন দপ্তরের ছাড়পত্র এখনও মেলেনি। সেই অচলাবস্থার জেরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের সংঘাত ফের প্রকাশ্যে এল।
বুধবার একটি প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী ও স্থানীয় বিধায়ক বিপ্লব মিত্র।
তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্যের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র না থাকায় বালুরঘাট বিমানবন্দরে উড়ান চালু করা যাচ্ছে না।
এই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন,
“রাজ্য একা সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে না। সিঙ্গেল ইঞ্জিনে প্লেন চালানো সম্ভব নয়। কেন্দ্র যদি ছাড় না দেয়, তাহলে ছোট প্লেনও নামবে না।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য কার্যত কেন্দ্রের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে একপ্রকার প্রতিবাদ হিসেবেই উঠে এসেছে। তিনি বারবার মানুষের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন এবং বলেছেন, “রাজনীতি হতে পারে, কিন্তু মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বরদাস্ত নয়।”
বর্তমানে বালুরঘাট বিমানবন্দরের ১৩৮০ মিটার রানওয়ে তৈরি রয়েছে। কিন্তু নবান্নের তরফে জানানো হয়েছিল, রাজ্যের বিমানবন্দরগুলি শুধু যাত্রী পরিবহণ নয়, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করা হবে। তাই কমপক্ষে ৯০ আসনসংখ্যা বিশিষ্ট বিমান ওঠানামার জন্য পর্যাপ্ত রানওয়ে বানানোর সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত রানওয়ে বানানোর জন্য মোট ১৮০০ মিটার জমির প্রয়োজন। ফলে বড় বিমান নামানোর ক্ষেত্রে এখনও আরও প্রায় ৪০০ মিটার রানওয়ে প্রয়োজন। কীভাবে রানওয়ে বাড়ানো যাবে, তা খতিয়ে দেখতে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার সদস্যরাও আসেন। কিন্তু এখন সেই প্রকল্প বিশবাঁও জলে। ভার্চুয়াল বৈঠকে বিপ্লব মিত্রকে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে যেন কফিনে শেষ পেরেক পোঁতা হয়ে গেল।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, কেন্দ্র “ডাবল ইঞ্জিন সরকার” নাম করে রাজ্যের প্রাপ্য উন্নয়ন রোধ করছে।
তাদের দাবি, কেন্দ্র চাইলে আগামীকাল থেকেই বালুরঘাটে বিমান নামানো সম্ভব। কিন্তু বারবার বিভিন্ন অজুহাতে উন্নয়নের গতি থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে মালদা বিমানবন্দরের রানওয়ের কাজ শেষ হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। কিন্তু এখনও চালু হয়নি বিমান পরিষেবা। মালদার জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘মালদায় বিমান পরিষেবা চলতি বছরেই চালু হবে। বিমানবন্দরের কিছু কাজ বাকি রয়েছে।মালদা শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘মালদায় বিমান পরিষেবা চালু হলে প্যাসেঞ্জারের অভাব হবে না। প্রতি বছরই আমরা শুনে আসছি, মালদায় বিমান পরিষেবা চালু হবে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে কোথায়?’
২২ মে থেকে পশ্চিমবঙ্গে ৭২ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট, বিপাকে নিত্যযাত্রী; কী বলছেন মালিকপক্ষ?
রাজ্যের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সিভিল অ্যাভিয়েশন দপ্তরকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। তবে এখনও কোনো অনুমতি মেলেনি।
তৃণমূল নেতাদের মতে, “এই নিষ্ক্রিয়তা শুধু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে রাজ্যের উন্নয়নে বাধা দেওয়া।”
বালুরঘাটের স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে আশা করেছিলেন, বিমানবন্দর চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন আসবে।
উত্তরবঙ্গের এই প্রত্যন্ত এলাকায় চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার জন্য কলকাতা বা দিল্লি পৌঁছনো অনেক সহজ হয়ে যেত।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, “প্লেন নামলে পর্যটন, কৃষিপণ্য পরিবহণ ও শিল্পেও গতি আসবে।”
কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র না আসায় সেই উন্নয়নের স্বপ্ন এখনও অধরা।
আরও পড়ুন :
ইংল্যান্ড সিরিজের আগে দুঃসংবাদ পেল ভারত, সর্বোচ্চ ৩টি টেস্ট খেলতে পারবেন এই তারকা