Breaking News

SuratExportsHalt TrumpTariffs

ট্রাম্পের ৫০ % শুল্ক আজকে থেকে কার্যকর, সুরাতের বহু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যেই তাদের ব্যবসার কেন্দ্র সিঙ্গাপুর, দুবাই কিংবা হংকং-এ সরিয়ে নিতে চাইছেন

সুরাতের হীরা ও টেক্সটাইল শিল্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে। ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ায় রপ্তানি স্থবির হয়ে গেছে এবং উৎপাদন বন্ধ হয়ে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে শিল্প মহল।

SuratExportsHalt TrumpTariffs Impact on Surat Economy %%page%% %%sep%% %%sitename%%

SuratExportsHalt TrumpTariffs

ক্লাউড টিভি ডেস্ক: ভারতের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বলা হয় গুজরাটের সুরাতকে। কারণ এখানেই বিশ্বের মোট হীরা কাটিং ও পালিশিং শিল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত হয়। শুধু তাই নয়, একই শহর দেশের বৃহত্তম টেক্সটাইল হাব হিসেবেও পরিচিত। তবে, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির ফলে সুরাতের এই দুই প্রধান শিল্প কার্যত অচলাবস্থায় চলে গেছে, এবং রপ্তানি থমকে যাওয়ায় শ্রমিকদের জীবনে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তার ঘন ছায়া।

প্রথমেই বলা দরকার, ট্রাম্প প্রশাসন ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া নতুন বাণিজ্য নীতিতে ভারতীয় হীরা, টেক্সটাইল এবং রেডিমেড পোশাক আমদানির ওপর শুল্ককে দ্বিগুণ করে দিয়েছে। আগে যেখানে প্রায় ২৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেখানে এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ। ফলে ভারতীয় রপ্তানি হঠাৎ করেই মার্কিন বাজারে অপ্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়েছে, এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সুরাত, তিরুপ্পুর ও নয়ডার কারখানাগুলিতে।

তবে শুধু শুল্কবৃদ্ধি নয়, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতাদের চাহিদা হ্রাস এবং চীনা বাজারে স্থানান্তরের প্রবণতাও সমস্যাকে জটিল করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুরাতের বহু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যেই তাদের ব্যবসার কেন্দ্র সিঙ্গাপুর, দুবাই কিংবা হংকং-এ সরিয়ে নিতে চাইছেন। কারণ সেখান থেকে মার্কিন বাজারে প্রবেশ করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।

অন্যদিকে, সুরাত ডায়মন্ড বোরস, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেছিলেন, আজ কার্যত ফাঁকা পড়ে আছে। ৪,৭০০ অফিস থাকার পরও বর্তমানে সেখানে ২৫০টিরও কম অফিস চালু আছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদা না থাকলে এই বিশাল অবকাঠামো ব্যবহার করার প্রশ্নই ওঠে না। এর ফলে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে রয়েছে।

শুধু হীরার শিল্প নয়, টেক্সটাইল ক্ষেত্রেও চিত্র ভয়াবহ। তিরুপ্পুর, নয়ডা এবং সুরাতের একাধিক রপ্তানিমুখী ইউনিট হঠাৎ করে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ মার্কিন ক্রেতারা আগেই তাদের অর্ডার বাতিল করে দিয়েছে অথবা নতুন অর্ডারের ক্ষেত্রে মূল্য কমাতে চাপ দিচ্ছে। এর ফলে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, যাদের অধিকাংশই অভিবাসী শ্রমিক। অনেকেই বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি সামগ্রিক রপ্তানি যে হারে বেড়েছে তার ৭ গুণ দ্রুত হারে বেড়েছে

ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে ঝুঁকিতে খোদ মার্কিন অর্থনীতি!

যদিও সরকারিভাবে এখনও কোনো বড় সহায়তার ঘোষণা হয়নি, তবে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন (FIEO) ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, রপ্তানি ক্রেডিট, সুদের ভর্তুকি, মরাটোরিয়াম এবং দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মতো উদ্যোগ এখনই প্রয়োজন। অন্যদিকে, দিল্লির কূটনৈতিক মহল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা শুরু করেছে, যদিও দ্রুত সমাধান হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, এই ধাক্কা শুধু সুরাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভারতের সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হতে পারে এবং এর প্রভাব মুদ্রা বিনিময় হার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং দেশের শিল্পোন্নয়নের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে, আশার কথা হলো ভারত ইতিমধ্যেই ইউরোপ, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং সৌদি আরবের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ভারতীয় হীরা ও বস্ত্র শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ছাড়া এত বড় শিল্পকে সচল রাখা সম্ভব হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতি সুরাতের মতো শহরের জন্য এক বিশাল ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হীরা ও বস্ত্র শিল্পের সংকট শুধুমাত্র শিল্পপতিদের নয়, লাখ লাখ শ্রমিকের জীবনকেও বিপন্ন করেছে। এখন দেখার বিষয়, ভারত সরকার কীভাবে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন :

ভারতের আইকনিক আমুল গার্ল : শশী থারুরের বোন শোভা থারুরই অনুপ্রেরণা, কি বলছে আমুল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবশরীরে ‘মাংসখেকো পরজীবী মাছি’ শনাক্ত

ad

আরও পড়ুন: