TrumpTariffs USEconomyCrisis
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে শুল্কনীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করছেন। চীন, ভারত, থাইল্যান্ডসহ একাধিক দেশের উপর আরোপ করা হয়েছে নতুন শুল্ক, যার লক্ষ্য ছিল আমদানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে ‘মেইক ইন আমেরিকা’ নীতিকে এগিয়ে নেওয়া।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। শুল্ক আরোপের কয়েক মাসের মধ্যেই মার্কিন অর্থনীতির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
খুচরা বিক্রির হার পতন
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ভোক্তা ব্যয়ের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি এই ব্যয়ে বড় প্রভাব ফেলছে।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে খুচরা বিক্রির হার কমেছে প্রায় ০.৯%। এর অর্থ, সাধারণ মার্কিন জনগণের কেনাকাটা কমে গেছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য অশুভ লক্ষণ।
বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানে সংকট
অন্যদিকে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে সংকট।
বর্তমান বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৪.২%, যা পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। বিশেষ করে মধ্যম ও ছোট আকারের কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে তারা ব্যয় সংকোচনে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, একদিকে বিদেশি পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ছে, অন্যদিকে নিজস্ব উৎপাদনেও খরচ বেড়ে যাচ্ছে—এই দ্বিমুখী চাপ সামাল দিতে গিয়ে চাকরি ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকছে না।
বিনিয়োগ কমছে, বেড়েছে শঙ্কা
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণায় ব্যবসায়ী মহলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি শুল্ক আশঙ্কা করে নতুন প্রকল্পে পুঁজিনিবেশ থেকে বিরত থাকছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শুধুমাত্র বিনিয়োগ খাতে নয়, বাজারে সামগ্রিক আস্থা হ্রাস পাবে, যা ধীরে ধীরে আর্থিক মন্দায় রূপ নিতে পারে।
চীনের ওপর ট্রাম্পের ১০৪ শতাংশ শুল্ক, বিশ্বজুড়ে এবার কী ঘটবে?
বড় ক্ষতির আশঙ্কা
একটি চাঞ্চল্যকর পূর্বাভাস দিয়েছে জেপি মরগান চেজ ইনস্টিটিউট।
তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১ থেকে ১০০ কোটি ডলারের বার্ষিক আয় থাকা মাঝারি মার্কিন কোম্পানিগুলো এই শুল্কনীতির ফলে ৮,২৩ বিলিয়ন ডলার (৮,২৩০ কোটি) পর্যন্ত ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে।
বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান চীন, ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানির উপর নির্ভরশীল, তাদের ক্ষেত্রে শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা খাত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতামত:
মেরি ক্লার্ক, অর্থনীতি বিশ্লেষক (NYT):
“ট্রাম্পের শুল্কনীতি অভ্যন্তরীণ শিল্প রক্ষা করতে পারছে না, বরং দেশীয় ব্যবসার উপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
ড্যান হফম্যান, জেপি মরগান চেজ:
“শুল্ক চাপ যত বাড়বে, কোম্পানিগুলোর লাভের মার্জিন তত কমবে, ফলে বেকারত্ব ও বিনিয়োগ হ্রাস অনিবার্য।”
চীন ও ভারত ইতোমধ্যেই পাল্টা শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে, যা বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র করে তুলবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাও (WTO) এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আরও বলুন :
‘গাজার জন্য নীরবতা’: আধঘণ্টার ডিজিটাল প্রতিবাদের ডাক দিল সিপিআই(এম)
নেতার ছবি নয়, এবার শুধু দলীয় প্রতীক: বিজেপি অফিসে ব্যাকড্রপে বদল ‘ব্যক্তিনির্ভরতা’ কমানোর কথা বলছে