Adoptive Mother Murder
উড়িষ্যা, ১৭ মে ২০২৫: ওড়িশার গাজাপতি জেলার পারালাখেমুন্ডি শহরে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক এবং একই সঙ্গে চাঞ্চল্যকর অপরাধ। ১৪ বছর আগে যাকে একটি রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল তার জৈবিক মা, সেই শিশুকে দত্তক নিয়েছিল এক পরিবার। বড় হয়ে সেই কিশোরীই এখন তার দত্তক মাকে হত্যা করেছে—এই অভিযোগে এখন সে পুলিশের হেফাজতে।
ঘটনার সূত্রপাত প্রায় দেড় দশক আগে, যখন মাত্র তিনদিন বয়সে একটি শিশু শহরের একটি রাস্তার পাশে পড়ে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা সরস্বতী পাতি ও তার স্বামী শিশুটিকে উদ্ধার করে তাকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করতে শুরু করেন। তাঁরা তাকে নাম দেন “চাঁদিনী” (ছদ্মনাম)। চাঁদিনী ছিল তাঁদের চোখের মণি—ভালবাসায় গড়ে ওঠা একটি সম্পর্ক, যেটি পরিণতি পেল এক মর্মান্তিক পরিণতিতে।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী তার প্রেমিকদের প্ররোচনায় সরস্বতী পাতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছে তার দুই প্রেমিক—২১ বছর বয়সী গহেশ রথ ও ২০ বছর বয়সী দিনেশ সাহু। তিনজন মিলে দত্তক মাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে অভিযোগ।
তদন্তে উঠে এসেছে, সরস্বতী পাতি তার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। কিশোরীর অপ্রাপ্তবয়স্ক বয়সে দুই প্রাপ্তবয়স্ক যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে তিনি মেয়েকে সাবধান করেছিলেন এবং সম্পর্ক শেষ করার জন্য চাপ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোরী মায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঘটনার দিন, রাতে তিনজন মিলে মায়ের ঘরে ঢোকে। মায়ের ঘুমন্ত অবস্থায় তারা মিলে তাকে হত্যা করে। এরপর তারা পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু খুব শিগগিরই পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায়।
মায়ের নামে নতুন পরিচয়ে প্রতীক! আনুষ্ঠানিকভাবে হলেন প্রতীক স্মিতা পাটিল
তাজ আক্রমণে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা NSG Commando জিগর ভাস এখন জেলবন্দী
গাজাপতি জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে এবং অপরাধে ব্যবহৃত প্রমাণাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযুক্ত কিশোরী ও তার প্রেমিকদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “চাঁদিনীকে আমরা ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি। কখনও ভাবিনি সে এমন ভয়ঙ্কর কিছু করতে পারে।”
এদিকে, সরস্বতী পাতির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে বর্তমান সমাজব্যবস্থার নৈতিকতা, পারিবারিক শিক্ষার ঘাটতি এবং কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা নিয়ে। একজন অবাঞ্ছিত শিশু যাকে সমাজের এক কোণ থেকে তুলে এনে ভালবাসার সংসারে জায়গা দেওয়া হয়েছিল, সেই মেয়ের হাতেই শেষ হলো এক মায়ের জীবন।
আরও পড়ুন :
কেদারনাথে এইমস রিষিকেশের হেলি-এম্বুলেন্সের জরুরি অবতরণ, অক্ষত সকল আরোহী
আকাশতীর’: ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরতার শক্তিশালী নিদর্শন