GauravKundi
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড শহরের পেইনহ্যাম রোডে ঘটে যাওয়া এক ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। ৪২ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত গৌরব কুন্ডি (GauravKundi) ও তাঁর স্ত্রী অমৃতপাল কউরের মধ্যে একটি ব্যক্তিগত বিবাদের সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। যদিও বিবাদটি বড় কিছু ছিল না এবং তাঁদের মধ্যে কোনও শারীরিক হিংসার অভিযোগ ছিল না, তথাপি পুলিশ পরিস্থিতিকে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ হিসেবে ধরে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও তাঁর স্ত্রী অমৃতপাল কউরের দাবি অনুযায়ী, গৌরব মদ্যপ থাকলেও তিনি শান্ত ছিলেন এবং পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে কোনও অপরাধ করেননি। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তাঁর কথা না শুনে তাঁকে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে মাটিতে ফেলে দেন। তখনই এক পুলিশ অফিসার গৌরবের গলায় হাঁটু দিয়ে চাপ প্রয়োগ করেন, যার ফলে তিনি মাটিতে ছটফট করতে থাকেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারান।
গৌরবকে তাৎক্ষণিকভাবে রয়্যাল অ্যাডিলেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, মাথার পেছনের অংশ, ঘাড় এবং স্নায়ুতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় তাঁর ব্রেন কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বর্তমানে তিনি কোমায় আছেন এবং ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, গৌরবের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এবং তাঁর মস্তিষ্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অনেকাংশেই অপরিবর্তনীয় হতে পারে।
ঘটনার সময় অমৃতপাল কউর একটি মোবাইল ভিডিও রেকর্ড করেন, যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় কীভাবে পুলিশ তাঁকে মারধর করছে, মাথা গাড়ির পাশে আছড়ে ফেলা হচ্ছে এবং গলায় হাঁটু চেপে ধরা হয়েছে।
ভিডিওতে গৌরবকে বলতে শোনা যায়, “আমি কিছু ভুল করিনি।” স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করছিলেন, “ওকে মারবেন না, ও কিছু করেনি!” ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর তা ভাইরাল হয়ে যায় এবং নানা মহল থেকে পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনা শুরু হয়।
এই ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া জুড়ে প্রতিক্রিয়া তীব্র। বিশেষত ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসীরা একে এক “বর্ণবাদী সহিংসতা” এবং “পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার” হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। মানবাধিকার সংস্থা Amnesty Australia ইতিমধ্যে একটি স্বতন্ত্র তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং ক্যানবেরায় ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
আমেরিকা ২১ লক্ষ কোটি ডলার ব্যয়ে গোপন বাঙ্কার নির্মাণ করেছে? প্রাক্তন সরকারি কর্তার বিস্ফোরক দাবি
বিশ্বজুড়ে এই ঘটনাকে ২০২০ সালের আমেরিকার মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানেও পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন জর্জ ফ্লয়েডের গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছিলেন, যার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে “Black Lives Matter” আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
অনেকেই বলছেন, গৌরব কুন্ডির ক্ষেত্রেও একই রকম নির্মমতা প্রদর্শন করেছে আইন রক্ষাকারী বাহিনী — তা সে যে দেশেই হোক না কেন।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে যে ঘটনাটি নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে তাঁরা প্রাথমিকভাবে পুলিশ সদস্যদের কর্মপদ্ধতিকে ‘প্রোটোকল অনুযায়ী’ বলেই উল্লেখ করেছে, যা জনসাধারণের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে।
বর্তমানে সিসিটিভি ফুটেজ এবং অমৃতপাল কউরের রেকর্ড করা ভিডিও সংগ্রহ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন :
অপারেশন ‘সিন্ধু’র গভীরে ভারত! পাকিস্তানি ডসিয়ারে চাঞ্চল্যকর দাবি ফাঁস