Mumbai child hostage rescue
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : আজ মুম্বইয়ের পোয়াইয়ে শিশু-বন্দি নাটকের পর উত্তেজনা, আতঙ্ক এবং রোমহর্ষক পুলিশের অভিযানে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হল অভিযুক্ত রোহিত আর্যর। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি গোটা মহারাষ্ট্রজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করে দেয়। এক দিকে ১৭ জন নিরীহ শিশু ও এক প্রবীণকে বন্দি করে রাখার অমানবিক ঘটনা, অন্য দিকে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ—সব মিলিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়।
দুপুর প্রায় ১টা ৪৫ মিনিটের সময় পুলিশে ফোন আসে। জরুরি বার্তায় জানানো হয়, পোয়াইয়ের একটি স্টুডিও ঘরে ছোট শিশুদের আটকে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই পুলিশ বুঝে যায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। স্টুডিওর নাম ছিল ‘RA Studios’। সেখানে ‘অডিশন’ দেখানোর নাম করে শিশুদের ডেকে আনে অভিযুক্ত রোহিত আর্য। পরে দরজা বন্ধ করে সবাইকে বন্দি করে রাখে।
এদিকে, পুলিশ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বারবার অভিযুক্তকে আত্মসমর্পণের আবেদন করে। যদিও রোহিত সেই অনুরোধ শোনেনি। বরং সে পুলিশকে ভয় দেখানোর জন্য একটি ‘এয়ারগান’ তাক করে গুলি চালায়। যদিও অস্ত্রটি আসল ছিল না, পুলিশ অনুমান করে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। সেই সময় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
তবে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। বাথরুমের দিক থেকে জোর করে প্রবেশ করে বিশেষ বাহিনী। ঠিক তখনই পুলিশের পাল্টা গুলিতে আহত হয় রোহিত আর্য। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা জানান, গুরুতর গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বন্দি থাকা শিশুরা শারীরিকভাবে অক্ষত রয়েছে। তবে মানসিক ধাক্কা কাটাতে কিছুদিন সময় লাগবে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ সরাসরি দরজা ভাঙার ঝুঁকি নেয়নি। কারণ শিশুদের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বাথরুম থেকে প্রবেশ করে লক্ষ্যভেদ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের গুলিবর্ষণ পরিস্থিতিকে জীবনমরণ লড়াইয়ে পরিণত করেছিল।
এছাড়া, উদ্ধার হওয়া শিশুদের অনেকেই ভয় এবং আতঙ্কে কাঁদছিল। তারা জানায়, রোহিত ‘অডিশন’ এর কথা বলে তাদের ডেকে এনেছিল। পরে আচমকাই দরজা বন্ধ করে সবাইকে ভয় দেখাতে শুরু করে। এই আচরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, অভিযুক্ত মানসিকভাবে অস্থিতিশীল ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। যদিও তদন্ত চলছে তার উদ্দেশ্য কী ছিল, একা কাজ করেছে, নাকি পেছনে কোনও বড় চক্র রয়েছে।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কেন পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর পথে নিয়ে গেল? তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্দুক তাক করা এবং শিশুদের প্রাণহানির সম্ভাবনা দেখেই পুলিশ তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেয়। এমন ঘটনা বিশ্বজুড়েই দেখা গেছে—‘Hostage Crisis’ পরিস্থিতিতে প্রথম লক্ষ্য থাকে বন্দিদের রক্ষা করা। সেই লক্ষ্যে, মুম্বই পুলিশ সফল।
স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। একজন অভিভাবক বলেন, “যদি দেরি হতো, জানি না কী হত। পুলিশ আমাদের সন্তাদের বাঁচিয়েছে।”
এদিকে, সমাজকর্মীরা এমন ঘটনার পর স্কুল ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। অচেনা অডিশন, ওয়ার্কশপ বা স্কাউটিংয়ের নামে শিশুদের কোথাও পাঠানোর আগে বিস্তারিত যাচাই জরুরি।
এই ঘটনায় স্পষ্ট—শিশুদের ওপর অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। তাই সাইবার মনিটরিং, স্থানীয় নজরদারি এবং শিশু নিরাপত্তা রক্ষায় সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুন :