Breaking News

নেপাল নতুন প্রধানমন্ত্রী বিমান ছিনতাই

নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী করেছিলেন বিমান ছিনতাই : ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মালা সিনহাও

নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির স্বামী একসময় বিমান ছিনতাই করেছিলেন। ১৯৭৩ সালের সেই ঘটনায় ছিনিয়ে নেওয়া অর্থ ব্যবহার হয়েছিল রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে।

নেপাল নতুন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী করেছিলেন বিমান ছিনতাই: ইতিহাস

নেপাল নতুন প্রধানমন্ত্রী বিমান ছিনতাই

ক্লাউড টিভি ডেস্ক : নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সুশীলা কার্কি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির জন্য তিনি একসময় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এবার সেই সুশীলা কার্কিই বসেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রীর আসনে। কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তার নাম সামনে আসে এবং অবশেষে তিনি দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব নেন। তবে রাজনৈতিক যাত্রার পাশাপাশি আলোচনায় এসেছে তার ব্যক্তিগত জীবনও। কারণ, তার স্বামী দুর্গা প্রসাদ সুবেদী নেপালের ইতিহাসের এক আলোচিত বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বিমান ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনা
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালের ১০ জুন রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিরাটনগর থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে উড়েছিল। সেই বিমানে যাত্রী হিসেবে ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মালা সিনহাও। মাঝআকাশে আচমকাই পাইলটের মাথায় পিস্তল তাক করে বিমানটি ভারতের বিহারের ফরবিসগঞ্জে নামাতে বাধ্য করেন সুশীলা কার্কির স্বামী দুর্গা প্রসাদ সুবেদী।

বিমানে থাকা সরকারি ব্যাংকের অন্তত ৪০ লাখ নেপালি রুপি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেই অর্থ গাড়িতে করে দার্জিলিং হয়ে পুনরায় নেপালে পৌঁছানো হয়। এ অর্থ ব্যবহার করা হয়েছিল তৎকালীন রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে।

ছিনতাইয়ের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
এ বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনায় মূল ভূমিকা ছিল নেপালি কংগ্রেসের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা গিরিজা প্রসাদ কৈরালার। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাতে তহবিলের প্রয়োজন ছিল। তাই এই অর্থ সংগ্রহের জন্যই বিমান ছিনতাইয়ের পথ বেছে নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই গিরিজা প্রসাদ কৈরালাই নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হন।

গ্রেপ্তার ও মুক্তি
ঘটনার পর দুর্গা প্রসাদ সুবেদী ও তার সহযোগীদের ভারতীয় পুলিশ মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তার করে। তারা দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন। তবে ১৯৭৫ সালে ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় রাজনৈতিক চাপ ও পরিস্থিতির কারণে তারা মুক্তি পান। এই ঘটনা আজও নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোচিত।

নতুন বিতর্কের সূচনা
সুশীলা কার্কি দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার স্বামীর অতীত আবার সামনে চলে এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদিও এ ঘটনা ৫০ বছর আগের এবং তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঘটেছিল, তবুও নতুন প্রজন্মের কাছে এটি কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি এমন একজনের জীবনসঙ্গী হন যিনি বিমান ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তাহলে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে।

নেপালে হিংসার জেরে গোটা দেশজুড়ে কার্ফু, শান্তির আর্জি জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

ইতিহাস গড়লেন সুশীলা কারকি, নেপালের প্রথম মহিলা অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী

অন্যদিকে সমর্থকরা মনে করেন, সুশীলা কার্কির ব্যক্তিত্ব, সততা ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে তার স্বামীর অতীত দিয়ে খাটো করা ঠিক হবে না। কারণ তিনি নিজস্ব যোগ্যতায় নেপালের বিচার বিভাগ ও রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
নেপালে ১৯৭০-এর দশকে গণতন্ত্র বনাম রাজতন্ত্রের টানাপোড়েন চরম আকার ধারণ করেছিল। আন্দোলনের তহবিল সংগ্রহের জন্যই এমন চরম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তাই এই বিমান ছিনতাই শুধু একটি অপরাধমূলক ঘটনা নয়, বরং সে সময়কার রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিফলন হিসেবেও দেখা হয়।

সবমিলিয়ে, সুশীলা কার্কির প্রধানমন্ত্রীত্ব নেপালের জন্য যেমন নতুন অধ্যায়, তেমনি তার স্বামীর অতীত রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি বিতর্কিত অধ্যায়কে আবার সামনে এনে দিয়েছে।

আরও পড়ুন :

পহেলগাম হামলায় নিহত পর্যটকের বাবার দাবি, ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ বন্ধ হোক

বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার দৌড়ে নামতে পারেন হরভজন

ad

আরও পড়ুন: