ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধে জড়িত ভারতীয়রা

UKCrime IndianCommunity

ক্লাউড টিভি ডেস্ক : ব্রিটেনে সংঘটিত যৌন অপরাধে সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে। দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চার বছরে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধে দণ্ড প্রদানের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে (UKCrime IndianCommunity)। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ প্রবাসী জনগোষ্ঠীর ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যৌন অপরাধে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে দেওয়া আদালতের রায়ের সংখ্যা ২৮ থেকে বেড়ে ১০০-তে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ মাত্র চার বছরে দণ্ড প্রদানের হার ২৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তুলনামূলকভাবে একই সময়ে নাইজেরিয়ার নাগরিকদের ক্ষেত্রে এ হার ১৬৬ শতাংশ এবং ইরাকের নাগরিকদের ক্ষেত্রে ১৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্রিটেনের বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকাশিত এ সংখ্যাগুলো শুধু আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দণ্ড পাওয়া ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ এই অপরাধের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্রিটেনের নাগরিক হতে এ বার অপেক্ষা করতে হবে ১০ বছর, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভারতীয় নাগরিকরা

চীন থেকে বিপজ্জনক ছত্রাক চোরাচালান: মার্কিন তদন্তে উদ্বেগ, বিশেষজ্ঞদের মতে COVID-এর থেকেও বড় হুমকি

তবে শুধু যৌন অপরাধেই নয়, গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও ভারতীয় নাগরিকরা শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ছিল ২৭৩ জন। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে এ সংখ্যা ১১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে তারা বিদেশি অপরাধীদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

বিচার মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিবেদন সামনে আসার পর ব্রিটেনের আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক সংহতি ও আইনের শাসনে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ যুক্তরাজ্যে ভারতীয় প্রবাসীদের সংখ্যা মোট বিদেশি জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ।

অন্যদিকে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিসংখ্যানকে পুরো ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিফলন হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং যারা অপরাধে জড়িত হচ্ছে, তাদের বিষয়ে পৃথকভাবে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। অনেক সময় সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক সংকট ও সাংস্কৃতিক অভিযোজনের অভাব থেকেও অপরাধপ্রবণতা বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া, রাজনৈতিকভাবে এই ইস্যু বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারে। কারণ ব্রিটেনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী শুধু সংখ্যার দিক দিয়েই নয়, অর্থনীতি ও রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেতাদের উত্থান এবং প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের নেতিবাচক পরিসংখ্যান সমাজে নতুন করে আলোচনা জাগিয়েছে।

অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি চালানো জরুরি। বিশেষ করে প্রবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে আইনি শিক্ষার প্রসার ঘটানো অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

এখন প্রশ্ন হলো, রেকর্ড ভাঙা এই পরিসংখ্যান ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি ও প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতি জনমতকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? যদিও এই বিষয়ে এখনো সরকার কোনো নতুন পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়নি, তবে জনমতের চাপ বৃদ্ধি পেলে কঠোর অভিবাসন নীতি গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন :

বিশ্বে প্রথম কার্যকর এইডস টিকা তৈরি করছে রাশিয়া

মার্কিন চাপের মুখে এক হচ্ছে তিন পরমানু শক্তিধর দেশ : শি-পুতিন-মোদির ঐক্য