Amitav Ghosh Nobel Prize 2025
ক্লাউড টিভি ডেস্ক: ভারতের সাহিত্যাঙ্গন আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের অপেক্ষায়। বিশ্বজুড়ে সাহিত্যপ্রেমীরা তাকিয়ে আছেন সুইডিশ অ্যাকাডেমির দিকে, কারণ আজই ঘোষণা হতে চলেছে ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কার সাহিত্য বিভাগে বিজয়ীর নাম। আর সেই ঘোষণার আগে থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন ভারতের প্রখ্যাত লেখক অমিতাভ ঘোষ (Amitav Ghosh)।যদি ঘোষ এই পুরস্কার জিতে নেন, তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর ১১২ বছর পর কোনো ভারতীয় সাহিত্যিক দ্বিতীয়বারের মতো সাহিত্য নোবেল জয় করবেন। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলির জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পান। এর পর থেকে বহু ভারতীয় লেখক বিশ্বসাহিত্যে সাড়া ফেললেও কেউ নোবেল কমিটির চূড়ান্ত স্বীকৃতি পাননি।
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫: আলোচনায় ট্রাম্প, ইমরান খান ও পোপ ফ্রান্সিসসহ ৫ সম্ভাব্য প্রার্থী
সির ক্রিক বিরোধ কি ? ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পুরনো ক্ষত আবারও সামনে
অমিতাভ ঘোষের সাহিত্য জীবন শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে। তাঁর রচনাগুলি আধুনিক ইতিহাস, ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসমাজের জটিল পারস্পরিক সম্পর্ককে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে আছে দ্য শ্যাডো লাইনস, দ্য গ্লাস প্যালেস, দ্য হাঙ্গ্রি টাইড এবং সাম্প্রতিক গান আইল্যান্ড।
ঘোষের কাজ বিশেষভাবে প্রশংসিত পরিবেশ সচেতনতার জন্য—বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের অস্তিত্ব সংকট নিয়ে তাঁর লেখায় যে গভীর মানবিকতা ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে, তা বিশ্বসাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন।
বিশ্বজুড়ে সাহিত্য সমালোচকরা মনে করছেন, অমিতাভ ঘোষের কাজ নোবেল কমিটির “বৈশ্বিক মানবতার দৃষ্টিভঙ্গি”র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। লাইভমিন্ট ও ওয়াশিংটন পোস্টসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তাঁর নাম শীর্ষ আলোচনায় উঠে এসেছে।
তবে প্রতিযোগিতা সহজ নয়। ঘোষের পাশাপাশি নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের দৌড়ে রয়েছেন হাঙ্গেরির László Krasznahorkai, চীনের Can Xue, কেনিয়ার Ngũgĩ wa Thiong’o, এবং জাপানের Haruki Murakami।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের নির্বাচন “প্রতীকী ভারসাম্য”র প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ — যেখানে ইউরোপ-কেন্দ্রিক ধারা ভেঙে এশীয় কণ্ঠস্বরকে প্রাধান্য দিতে পারে নোবেল কমিটি।
অমিতাভ ঘোষের সাহিত্যকর্ম একদিকে ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও প্রবাসী সমাজের যন্ত্রণা তুলে ধরে, অন্যদিকে তাঁর কলমে ফুটে ওঠে পরিবেশ ও সভ্যতার দ্বন্দ্ব। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, উপনিবেশবাদ ও আধুনিকতার সংঘাত—সবকিছুর মাঝে তিনি খুঁজেছেন মানবতার মূল সূত্র। তাঁর “ইবিস ট্রিলজি” (Sea of Poppies, River of Smoke, Flood of Fire) বিশ্বজোড়া প্রশংসা কুড়িয়েছে, কারণ সেখানে ভারতীয় চা-আফিম বাণিজ্য, শ্রমিক প্রবাস ও সাম্রাজ্যবাদের জটিল ইতিহাস জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
সাহিত্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘোষের কাজ সাহিত্যকে “রাজনীতি ও ইতিহাসের মিশ্রিত পাঠ” হিসেবে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। তাঁর লেখায় ভাষা ও সময়ের সীমা ভেঙে যায়—যেখানে বাংলা ও ইংরেজি দু’টি সংস্কৃতির সংমিশ্রণে উঠে আসে বৈশ্বিক মানবজীবনের গল্প।
যদি ঘোষ এবার নোবেল জিতে নেন, তবে শুধু ভারত নয়—সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া নতুন গর্বের অধিকারী হবে। সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে পরিবেশ ও সভ্যতা নিয়ে তাঁর যে গভীর চিন্তাভাবনা, সেটিই হয়তো আজ বিশ্বকে ছুঁয়ে ফেলবে।
আরও পড়ুন :
ড্রোন, জিও-লোকেশন ট্র্যাকার নিয়ে কাশির সিরাপে মৃত্যুর ঘটনায় নাটকীয় অভিযান, গ্রেফতার ফার্মা মালিক