২০২৫ নোবেল চিকিৎসা পুরস্কার
ক্লাউড টিভি ডেস্ক | স্টকহোম, ৬ অক্টোবর ২০২৫ : চিকিৎসাবিদ্যায় অনবদ্য অবদান রাখায় চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন বিজ্ঞানী— মেরি ই. ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাকাগুচি। সোমবার (৬ অক্টোবর) সুইডেনের স্টকহোমে ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট থেকে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি। “Peripherial Immune Tolerance” বা “পরিফেরাল ইমিউন সহনশীলতা” নিয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্যই তাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
এ বছরের পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি ১০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনা, যা তাঁরা যৌথভাবে ভাগ করে নেবেন। এই ঘোষণা দিয়েই শুরু হল নোবেল সপ্তাহের আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবার পদার্থবিদ্যা, বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য, শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১৩ অক্টোবর অর্থনীতিতে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।
ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্যের রহস্য
মানব শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম আমাদের জীবাণু, ভাইরাস ও অন্যান্য ক্ষতিকর অনুজীব থেকে রক্ষা করে। কিন্তু একটি মৌলিক প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছিল— কেন ইমিউন সিস্টেম নিজের শরীরকেই আক্রমণ করে না?
শরীরের কোষ ও প্রোটিনগুলো ‘নিজের’ বলে চিনে নিয়ে ইমিউন সিস্টেম সাধারণত সেগুলিকে আক্রমণ করে না। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় “immune tolerance” বা সহনশীলতা। তবে কখনও কখনও এই ভারসাম্য নষ্ট হলে ঘটে বিপর্যয়— দেখা দেয় অটোইমিউন রোগ, যেমন টাইপ-১ ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা লুপাস।
বিজয়ী তিন বিজ্ঞানীর গবেষণা সেই ভারসাম্যের রহস্য উন্মোচন করেছে। তাঁরা দেখিয়েছেন, শরীরের ভেতর এক বিশেষ ধরণের কোষ— regulatory T-cells (T-regs) — এই ভারসাম্য বজায় রাখতে মুখ্য ভূমিকা নেয়।
আবিষ্কার: “Regulatory T-Cells” এবং FOXP3 জিন
জাপানি বিজ্ঞানী শিমন সাকাগুচি ১৯৯৫ সালে প্রথম শনাক্ত করেন এই বিশেষ ধরণের কোষ, যেগুলো ইমিউন সিস্টেমের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া রোধ করে। পরে তিনি প্রমাণ করেন, এই কোষের অভাব হলে শরীর নিজেকেই ক্ষতি করতে শুরু করে।
অন্যদিকে, মেরি ব্রাঙ্কো এবং ফ্রেড রামসডেল ২০০১ সালে scurfy নামের এক ধরনের মাউসের উপর গবেষণা করে দেখান যে এই প্রাণীদের মধ্যে এক বিশেষ জিন— FOXP3 — নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তারা তীব্র অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয়। গবেষকরা আবিষ্কার করেন, এই FOXP3 জিনই মানুষের regulatory T-cell গঠনের মূল নিয়ন্ত্রক।
এই তিন বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের ফলে “Peripheral Immune Tolerance”— অর্থাৎ শরীরের বাইরের অংশে কিভাবে ইমিউন কোষ নিজস্ব টিস্যুকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে— সে বিষয়ে নতুন দিগন্ত খুলে যায়।
₹৩০,০০০ কোটির QRSAM চুক্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষায় ঐতিহাসিক শক্তিবৃদ্ধি
“যদি নোবেল দিলে উনি চুপ থাকেন, তবে তা দেওয়া হোক”— ট্রাম্পকে ব্যঙ্গ করে টুইট চলচ্চিত্র পরিচালকের!
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লবী প্রভাব
এই গবেষণা চিকিৎসা বিজ্ঞানের একাধিক ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
অটোইমিউন রোগ নিয়ন্ত্রণে নতুন দিশা: T-regs-এর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে অনেক জটিল রোগ প্রতিরোধের উপায় বের হতে পারে।
ক্যান্সার থেরাপিতে সহায়ক ভূমিকা: ক্যান্সার কোষকে ইমিউন সিস্টেম যেন বেশি কার্যকরভাবে আক্রমণ করে, সেই জন্য T-regs দমন প্রযুক্তি ব্যবহার হতে পারে।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সাফল্য বৃদ্ধি: প্রতিস্থাপিত অঙ্গ যাতে শরীর প্রত্যাখ্যান না করে, তাতেও এই আবিষ্কার নতুন আশা দেখাচ্ছে।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওল ক্যাম্পে বলেন, “তাঁদের কাজ আমাদের দেখিয়েছে, ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্য কীভাবে জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে সূক্ষ্ম সীমা তৈরি করে।”
বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
মেরি ই. ব্রাঙ্কো
সিয়াটলের Institute for Systems Biology-এর গবেষক। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জনের পর তিনি ইমিউনোলজির মলিকিউলার জিনতত্ত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেন।
ফ্রেড রামসডেল
সান ফ্রান্সিসকো ভিত্তিক Sonoma Biotherapeutics-এর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা। তাঁর নেতৃত্বে FOXP3 জিন নিয়ে গবেষণাই পরবর্তী চিকিৎসা বিপ্লবের ভিত্তি তৈরি করেছে।
শিমন সাকাগুচি
জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনিই প্রথম T-regs কোষের ধারণা দেন এবং তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেন।
⚗️ বিজ্ঞান থেকে চিকিৎসা— ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
যদিও তাঁদের গবেষণা মূলত মৌলিক জীববিজ্ঞানের পরিসরে, তবু এর প্রভাব ভবিষ্যৎ চিকিৎসায় গভীরভাবে পড়বে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বহু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে যেখানে T-regs-এর কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে অটোইমিউন রোগ ও ক্যান্সার চিকিৎসার পথ তৈরি করা হচ্ছে।
তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়— উপযুক্ত মাত্রা নির্ধারণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোধ এবং দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন বড় প্রশ্ন।
তবু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই আবিষ্কারকে এক মাইলফলক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ এটি শুধু রোগ প্রতিরোধের নতুন ধারণা দেয়নি, বরং ইমিউন সিস্টেমের “ব্যালান্স” বা ভারসাম্য রক্ষার এক দার্শনিক ব্যাখ্যাও দিয়েছে।
নোবেল চিকিৎসাবিদ্যা পুরস্কার ২০২৫ প্রমাণ করল, মৌলিক গবেষণাই ভবিষ্যতের চিকিৎসার ভিত্তি গড়ে দেয়। তিন বিজ্ঞানীর এই কাজ মানব শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বোঝার পথকে আরও বিস্তৃত করল। তাঁরা দেখালেন, ইমিউন সিস্টেমের ‘শত্রু’ ও ‘বন্ধু’ চেনার ক্ষমতাই জীবনের টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি।
আরও পড়ুন :
মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে রেকর্ড বৃষ্টি! শহরের রাস্তাঘাট জলে ডুবে অচলাবস্থা
ফুটবলে আসছে গ্রিন কার্ড! রেফারির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জের নতুন নিয়মে বদল আসছে খেলায়